ԵՀ গোবিন্দ দাসের করচা তাহাতে বই খানির প্রচার বেশী হইত। এই ভাবে অনেক শাস্ত্র কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের নামে প্রচারিত হইয়াছে। গোসাইজ কৰ্ম্মকারের নামে স্বরচিত-গ্রন্থ লিখিয়া পুস্তকখানির কি প্রতিপত্তি বেশী করিতেন এবং নিজের গৌরবেরই বা কি শ্ৰীবৃদ্ধি করিতেন ! যখন অমৃতবাজার পত্রিকার মতিবাবুরা এই পুস্তকের পূর্ববৰ্ত্তী সংস্করণের ২২৭ পৃষ্ঠার মধ্যে ৫১ পৃষ্ঠা সন্দেহাত্মক বলিয়া ঘোষণা করিয়াছিলেন, তখন স্বয়ং মতি বাবু লিখিয়াছিলেন “লেখক কি অভিপ্রায়ে এই অলৌকিক অংশটা লিখিয়াছিলেন, তাহা আমরা জানি না।” ( শ্ৰীবিষ্ণুপ্রিয়া পত্রিকা ৪১০ গৌরাঙ্গ, কাৰ্ত্তিক মাস ) বস্তুতঃ কায়স্থকে কৰ্ম্মকার প্রতিপন্ন করিবার কোন উদেশ্ব গোস্বামী মহাশয়ের ছিল না । গোবিন্দ কৰ্ম্মকার নামক যে মহাপ্রভুর সহচর কেহ ছিল, তৎকালে তাহার ঘুর্ণাক্ষর ও তিনি কিংবা অপর কেহ জানিতেন না । তাহার পরে প্রাচীন চৈতন্ত-মঙ্গলের পুথিতে গোবিন্দ কৰ্ম্মকারের নাম পাওয়াতে সেই আন্দোলনটি একবারে নিবিয়া গিয়াছিল । যদি ও এই ভূমিকায় আমরা করচার প্রামাণিকতা দেখাইতে যাইয়া বিবিধ বাহিরের প্রমাণ দিয়াছি, তথাপি আমার নিকট ঐ সকল প্রমাণের কোনই দরকার নাই। যেরূপ অগ্নির সম্মুখীন হইলে চক্ষু বুজিয়ী তাপ দ্বারাই অগ্নির অস্তিত্ব বুঝা যায়, এই পুস্তকের অপূৰ্ব্ব প্রেম-মাদকতাই আমার নিকট ইহার প্রামাণিকতার বড় সাক্ষী। মহাপ্রভুর প্রাণমাতান যে দেবচিত্র গোবিন্দ আঁকিয়াছেন, তাহাই তাহার প্রধান সাক্ষী । যে ভৌগলিক চিত্র তিনি দিয়াছেন তাহাই তাহার প্রধান সাক্ষী। এই পুস্তকের আলেখ্য সেই অলোকসামান্ত দ্যুলোকের বার্তাবাহী প্রেম-দেবতার আলোক-চিত্র, উহা কেহ পাণ্ডিত্যের দ্বারা, ভক্তির দ্বারা, বা স্বকপোলকম্পনা দ্বারা আঁকিতে পারিবেন না । প্রতিবাদীরা অনেক মিথ্যার আশ্রয় করিয়াছেন, কিন্তু কাশীদাসের ভাষায় বলিব— “কতক্ষণ জলের তিলক রহে ভালে। কতক্ষণ রহে শিল শূন্তেতে মারিলে ?” চৈতন্য দেবের ধৰ্ম্ম বিশ্বাস । একথাটি ঠিক চৈতন্তদেব শাক্তও নহেন, বৈষ্ণবও নহেন, তিনি গৃহীরও নহেন, সন্ন্যাসীরও নহেন—তিনি সকলেরই। বৈষ্ণবেরা তাহাকে যে ভাবে বুঝিয়াছেন, তাহাই যে ঠিক একথা বলা যায় না। তিনি নিজে কখনও অবতার বলিয়া নিজের পরিচয় দেন নাই, অশেষ দৈন্ত সহকারে পুনঃ পুনঃ জানাইয়াছেন, তিনি মানুষ । অজ্ঞানাবস্থায় তিনি কি কহিয়াছেন বা করিয়াছেন, তাহ লইয়া তাহার অবতারত্ব প্রতিপাদন জন্ত কোন কোন লেখক যাহা বর্ণনা করিয়াছেন, তাহা আমাদের কাছে অতিরঞ্জিত ও অবিশ্বাস্ত বলিয়া মনে হয়। সে ভাবের কথা করচায় একটিও নাই। বরং চৈতন্ত ভাগবত যে লিখিয়াছেন যে তাহার সম্মুখে এমন কাহারও সাধ্য ছিল না
পাতা:গোবিন্দ দাসের করচা.djvu/৮৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।