বল্লাল রাজার বাড়ী তাহার নিকটে। ভাঙ্গ চুর প্রমাণ আছয়ে তার বটে। ঘাটে বসি কত খানা ভাবিতেছি মনে । হেন কালে শ্রীচৈতন্ত আইলেন স্নানে ॥ কটিতে গামছা বাধা আশ্চৰ্য্য গঠন। সঙ্গে এক অবধৌত প্রফুল্ল বদন ॥ তিন চারি সঙ্গী আরো নাচিতে নাচিতে । স্বানে নামিলেন প্রভু গঙ্গার গর্ভেতে ॥ অবধৌত বীর পাড়ু হৈতে ঝাপ দিলা । সাতারিয়া জল কেলি করিতে লাগিলা ॥ তখন নদীয় গঙ্গানদীর পুৰ্ব্ব উত্তর তীরে এবং পদ্মার শাখানদী জলঙ্গী বা খড়িয়ার পশ্চিম দিকে অবস্থিত ছিল ; তাহ হইলে বাগেদী নদী—গঙ্গা বা পদ্মা ইহার কোনটা হইতে বহির্গত হইয়াছিল, তাহ। প্রত্নতত্ত্ববিদের স্থির হইয়া লইবেন। অধুনা মেয়াপুর গ্রামের মধ্যে একটা প্রাচীন জল-প্রবাহের চিহ্ন বৰ্ত্তমান আছে । ইহা খড়িয়া নদীর ব্যবধানে তফাৎ হইয় পড়িলেও মহেশ গঞ্জের নীচের জল স্রোতের সহিত সে এককালে সংযুক্ত ছিল তাহ প্রতীত হইয়। থাকে। তাহ হইলে বাগেদবী নদী যে প্রাচীন নবদ্বীপের নিকট দিয়াই প্রবাহিত ছিল, তাহ কে না বলিবে ?” শান্তিপুরের নিকটবৰ্ত্তী হরিপুর গ্রামে বহুদিন হইতে বাগেদবী দেবতা প্রতিষ্ঠিত আছেন । “প্রাচীন নবদ্বীপ—প্রাচীন নবদ্বীপের অবস্থান ভূমি ! অতি বিশাল ছিল। মেয়াপুর, ভারই ডাঙ্গ, সরডাঙ্গ, গাদাগাছ, সুবর্ণবিহার, মাজিদ, ভালুক, কুলিয়া, : সমুদ্রগড়, রাহুতপুর, বিদ্যানগর, মামগাছৗ, মহৎপুর, জান নগর, রুদ্র ডাঙ্গা, শরপুর, পুৰ্ব্বস্থলী প্রভৃতি গ্রাম ইহার অন্তর্গত ছিল । এখনও ঐ সকল গ্রাম বিদ্যমান আছে, কিন্তু নবদ্বীপ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয় পড়িয়ছে । যে স্থলে বর্তমান নবদ্বীপ অবস্থিত, তাহ প্রাচীন নৰদ্বীপের উপকণ্ঠ-পল্লী, খাস নবদ্বীপ হইতে অনেক দূর । উহ। তখন কুলিয়া নামে পরিচিত ছিল। মেয়াপুর (মায়াপুর ) এবং তৎসংলগ্ন পল্লীই প্রাচীন নবদ্বীপের শেষ চিহ্ন। এই ভূমিতেই রাজা বল্লালসেনের গোবিন্দ দাসের করচা শ্ৰীবাস ঠাকুর পিছু পিছু দামোদর। সিদ্ধ হরিদাস আর বামে গদাধর ॥ অবশেষে আইলা তথি অদ্বৈত গোদাই । এমন তেজস্বী মুহি কভু দেখি নাই ৷ পক্ক কেশ পক্ক দাড়ী বড় মোহনিয় । দাড়ী পড়িয়াছে তার হৃদয় ছাড়িয়া ৷ * রাজপ্রাসাদ ছিল । এবং সেই রাজপ্রাসাদে হইতেই বল্লাল সেন বীর বক্তিয়ার খিলঞ্জীর আক্রমণে পলায়ন করিয়াছিলেন, এবং এই ভূমিতেই চৈতন্যদেৰ জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন । আমাদের এই উক্তি যে সৰ্ব্বাংশে সত্য তাহ কেহই অস্বীকার করি:ত পারেন না । কেনন। এখনও এই ভূমিতে রাজ বল্লালসেনের স্মৃতির পরিচায়ক বল্লাল দীঘি, এবং রাজপ্রাসাদ গঙ্গ গর্ভপাৎ হইলেও "বল্লাল ঢ়িব" নামে একটা উচ্চস্ত,প বিদ্যমান রহিয়াছে। কিছু দিন পুৰ্ব্বে বামন পুখুরিয়ার প্রসিদ্ধ জমাদার খান সাহেব মোল্লা খোদাদীদ সাহেব উক্ত ঢিবী খনন ক, রয়া কয়েক খানি জীর্ণ বারকোশ এবং গলিত স্খলিত সিন্দুক আবিষ্কার করেন। সিন্দুকের ভিতর হইতে কয়েকটা রূপার টাকা এবং গলিত স্খলিত শাল ও পশমী কাপড় পাওয়া গিয়াছিল। মেয়াপুরই চৈতষ্ঠ দেবের জন্ম-ভিট ও বাস ভূমি । যে কাজীর সহিত ডাহার মতান্তর ঘটে, তাহারও | | i | কবর আজ পর্য্যন্ত মেয়াপুরের উত্তর পূর্ব দিকে মেল্লি সাহেবের বাড়ীর নিকট বিদ্যমান মহিয়াছে । কবরের পাশে একটা বৃহৎ কাঠ-মল্লিক। ফুলের গাছ আছে । শুনিতে পাই, অনেক হিন্দু কবরে ফুল সিন্নি দিয়া সেলাম করে। ইহার নাম চাদ কাজী । ইহ অপেক্ষ প্রাচীন নবদ্বীপের অবস্থান-ভূমির নিদর্শন আর কি হইতে পারে ? অনুসন্ধান সমিতির উৎসাহশীল ব্যক্তিগণ যদি ঐ স্থানে গিয়া ভূমি খননাদি করেন, তাহ হইলে প্রাচীন নবদ্বীপের আরও অনেক তথ্য আবিষ্কৃত হইতে পারে।”
- বঙ্গসাহিত্য পরিচয়, ১ম ভাগ ৭৫৭ পৃষ্ঠার প্রাচীন চিত্র দ্রষ্টব্য ।
“প্রবল লোম বক্ষগম" গোর-পদ তরঙ্গিণী, s৪১ধূঃ।