গোবিন্দ দাসের করচা প্রভুর বিরহ বেথা কেমনে সহিব । কেমনে চৈতন্ত বিনা কাল কাটাইব ॥ তার পরে প্রভুপাদ স্বয়ং উঠিয়া । মুকুন্দের কাছে প্ৰভু গেলেন চলিয়া ॥ সঙ্গে সঙ্গে যাই আমি কাদিতে কাদিতে । নয়নের জলে পথ না পাই দেখিতে ॥ মুকুন্দেরে ডাক দিয়া বলিলা বচন । দও কমণ্ডলু আমি করিব গ্রহণ ॥ শিখা স্বত্র ত্যাগ করি সন্ন্যাস লইব । . তাহা না করিলে কিসে জীব উদ্ধারিব ॥ এহি বাক্য শুনিয়া মুকুন্দ মহাশয় । অশ্র স্রোতে ভাসাইলা বিশাল হৃদয় ॥ আছাড় খাইয়া তবে মুকুন্দ পড়িল । হাতে ধরি উঠাইয়া প্রভু বসাইল । প্রাণ যায় কি শুনালে ওহে দয়াময় । । কথা শুনে অভাগার ফাটিছে হৃদয় ॥ আর কিছু দিন হরিনাম বিতরিয়া । সন্ন্যাস করিও প্রভু সংসার তেজিয়া ॥ এত শুনি প্ৰভু গদাধরের নিকটে । ধাইয়া গিয়া সব কথা কন অকপটে ॥ শুনি বাণ গদাধর ফুকারি উঠিল । আকাশ ভাঙ্গিয়া তার মাথায় পড়িল ॥ লট পটি গদাধর ভূমে গড়ি যায়। রক্তবর্ণ দেহ হইলা শোণিত ধারায় ॥ কি শুনালে উঠে বসি বলে গদাধর। তোমার..................... অস্তর ॥ মোরে বলে আন বিষ শীঘ্র মুহি পিব। প্রভুর বিয়োগ উহু কেমনে সহিব ৷ কোটি বৃশ্চিকেতে যদি দংশন করয়। ইহা হৈতে সে যাতনা অতি তুচ্ছ হয় ॥ প্রাণের নিমাই যদি হয় সৰ্ব্বত্যাগী । সঙ্গে সঙ্গে যাব মুহি হয়ে অম্বুরাগী ॥ | মুরারি প্রভূতি ভক্ত শুনিলে এ কথা । জ্ঞানশূন্ত হইয়া পড়িবে যথা তথা । চৈতন্থ ছাড়িলে দেহে কিবা আর কাজ । এই দণ্ডে আমাদের মুণ্ডে পড়ু বাজ ॥ অনস্তর গদাধর পাকড়ি চরণ । কহিতে লাগিলা অশ্র করি বরষণ ॥ তোমার জননী যবে এ কথা শুনিবে। কেমনে তখন দেহে পরাণ ধরিবে ॥ তার পরে এই কথা শুনি কাণা কাণি । বৈষ্ণবগণের আহা উড়িল পরাণী ॥ কেহ বলে কোটি বিছ। দংশন করিছে। কেহ বলে প্রাণ মোর আগুনে পুড়িছে। কেহ ছিন্ন বৃক্ষ সম পড়ে দাণ্ডাইয়া । দাতি লেগে কেহ কেহ পড়িল ঢলিয়া ॥ এই সব শুনিয়া আমার বিশ্বম্ভর । সকলেরে বুঝাইতে লাগিল বিস্তর ॥ বৈষ্ণবগণের কাছে প্ৰভু ধাইয়া গিয়া । সকলেরে মিষ্ট ভাষে দিলেন বুঝাইয়া ॥ তার পরে শচী দেবী এই বাক্য শুনি । পড়িলা অজ্ঞান হৈয়া পরমাদ গণি ॥ হৃদয় চাপড়ি শচী কান্দে উচ্চস্বরে । অশ্রুধারা পড়ে তার হৃদয় উপরে ॥ হায় রে নিমাই তুই কোথা যাবি বাপ । পশু পক্ষী কানো তার শুনিয়া বিলাপ ॥ তার পরে অবধৌত প্রভুর প্রাঙ্গণে । প্রবেশিয়া ঐ কথা কন শচী সনে ॥ বজ্ৰ সম বাক্য শচীর হৃদয়ে বিন্ধিল । অমনি আছাড়ে শচী ভূতলে পড়িল ৷ হৃদয়ে চাপড় মারি কানো উভরায় । পঙ্কিল হইল ধরা অশ্রুর ধারায় ॥ বিষ্ণুপ্রিয় ঐ কথা কাণাকাণি শুনি। মাথে হাত দিয়া সতী বসিলা অমনি ॥ অশ্রু পড়ে ঝর ঝর হৃদয় বাহিয়া । উঠিলেক শোকসিন্ধু যেন উথলিয়া ॥
পাতা:গোবিন্দ দাসের করচা.djvu/৯৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।