পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

উঠিবার কোনো চেষ্টা করিতে পারে নাই। চেষ্টা করিলেও বরদাসুন্দরী তখনই তাহাকে দাবাইয়া দিতেন; তাই সে আজ পাশের ঘরে যেন আপন মনে উচ্চস্বরে কাব্যচর্চায় প্রবৃত্ত হইল। শুনিয়া সুচরিতা হাস্য সম্বরণ করিতে পারিল না।

 এমন সময় লীলা তাহার মুক্ত বেণী দোলাইয়া ঘরে ঢুকিয়া সুচরিতার গলা জড়াইয়া ধরিয়া তাহার কানে কানে কী একটা বলিল। অমনি সতীশ ছুটিয়া তাহার পিছনে আসিয়া কহিল, “আচ্ছা, লীলা, বলে দেখি ‘মনোযোগ’ মানে কী।”

 লীলা কহিল, “বলব না।”

 সতীশ। ইস্! বলব না! জান না তাই বলো-না।

 বিনয় সতীশকে কাছে টানিয়া লইয়া হাসিয়া কহিল, “তুমি বলো দেখি, ‘মনোযোগ’ মানে কী।”

 সতীশ সগর্বে মাথা তুলিয়া কহিল, “মনোযোগ মানে মনোনিবেশ।”

 সুচরিতা জিজ্ঞাসা করিল, “মনোনিবেশ বলতে কী বোঝায়?”

 আত্মীয় না হইলে আত্মীয়কে এমন বিপদে কে ফেলিতে পারে। সতীশ প্রশ্নটা যেন শুনিতে পায় নাই, এমনি ভাবে লাফাইতে লাফাইতে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল।

 বিনয় আজ পরেশবাবুর বাড়ি হইতে সকাল সকাল বিদায় লইয়া গোরার কাছে যাইবে নিশ্চয় স্থির করিয়া আসিয়াছিল। বিশেষত গোরার কথা বলিতে বলিতে গোরার কাছে যাইবার উৎসাহও তাহার মনে প্রবল হইয়া উঠিল। তাই সে ঘড়িতে চারটে বাজিতে শুনিয়া তাড়াতাড়ি চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া পড়িল।

 সুচরিতা কহিল, “আপনি এখনি যাবেন? মা আপনার জন্যে খাবার তৈরি করছেন; আর-একটু পরে গেলে চলবে না?”

 বিনয়ের পক্ষে এ তো প্রশ্ন নয়, এ হুকুম। সে তখনই বসিয়া পড়িল। লাবণ্য রঙিন রেশমের কাপড়ে সাজিয়া-গুজিয়া ঘরে প্রবেশ করিয়া কহিল,

৯৭