পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 বিনয় হাসিয়া কহিল, “আপনাকে সত্য করেই বলছি, গোরার মতো আমার বিশ্বাসের জোর নেই। জাতিভেদের আবর্জনা ও সমাজের বিকারগুলো যখন দেখতে পাই তখন আমি অনেক সময়েই সন্দেহ প্রকাশ করে থাকি— কিন্তু গোরা বলে, বড়ো জিনিসকে ছোটো করে দেখলেই সন্দেহ জন্মে— গাছের ভাঙা ডাল ও শুকনো পাতাকেই গাছের চরম প্রকৃতি বলে দেখা বুদ্ধির অসহিষ্ণুতা— ভাঙা ডালকে প্রশংসা করতে বলি নে, কিন্তু বনস্পতিকে সমগ্র করে দেখো এবং তার তাৎপর্য বুঝতে চেষ্টা করো।”

 সুচরিতা। গাছের শুকনো পাতাটা নাহয় নাই ধরা গেল, কিন্তু গাছের ফলটা তো দেখতে হবে। জাতিভেদের ফলটা আমাদের দেশের পক্ষে কী রকম?

 বিনয়। যাকে জাতিভেদের ফল বলছেন সেটা অবস্থার ফল, শুধু জাতিভেদের নয়। নড়া দাঁত দিয়ে চিবোতে গেলে ব্যথা লাগে, সেটা দাঁতের অপরাধ নয়, নড়া দাঁতেরই অপরাধ। নানা কারণে আমাদের মধ্যে বিকার ও দুর্বলতা ঘটেছে বলেই ভারতবর্ষের আইডিয়াকে আমরা সফল না করে বিকৃত করছি— সে বিকার আইডিয়ার মূলগত নয়। আমাদের ভিতর প্রাণ ও স্বাস্থ্যের প্রাচুর্য ঘটলেই সমস্ত ঠিক হয়ে যাবে। গোরা সেইজন্যে বার বার বলে যে, মাথা ধরে বলে মাথাটাকে উড়িয়ে দিলে চলবে না— সুস্থ হও, সবল হও।

 সুচরিতা। আচ্ছা, তা হলে আপনি ব্রাহ্মণ জাতকে নরদেবতা বলে মানতে বলেন? আপনি সত্যি বিশ্বাস করেন ব্রাহ্মণের পায়ের ধুলোয় মানুষ পবিত্র হয়?

 বিনয়। পৃথিবীতে অনেক সম্মানই তো আমাদের নিজের সৃষ্টি। রাজাকে যতদিন যে কারণেই হোক দরকার থাকে ততদিন মানুষ তাকে অসামান্য বলে প্রচার করে। কিন্তু রাজা তো সত্যি অসামান্য নয়। অথচ নিজের সামান্যতার বাধা ভেদ করে তাকে অসামান্য হয়ে উঠতে হবে, নইলে সে রাজত্ব করতে পারবেই না। আমরা রাজার কাছে থেকে উপযুক্তরূপ

১৪১