পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কখনো অভিনয় করি নি— আমাকে কেন?”

 ললিতা কহিল, “আমরাই বুঝি জন্মজন্মান্তর অভিনয় করে আসছি?”


 এই সময় বরদাসুন্দরী ঘরের মধ্যে আসিয়া বসিলেন। ললিতা কহিল, “মা, তুমি অভিনয়ে বিনয়বাবুকে মিথ্যা ডাকছ। আগে ওঁর বন্ধুকে যদি রাজি করাতে পার তা হলে—"

 বিনয় কাতর হইয়া কহিল, “বন্ধুর রাজি হওয়া নিয়ে কথাই হচ্ছে না। অভিনয় তো করলেই হয় না— আমার যে ক্ষমতাই নেই।”

 বরদাসুন্দরী কহিলেন, “সেজন্যে ভাববেন না— আমরা আপনাকে শিখিয়ে ঠিক করে নিতে পারব। ছোটো ছোটো মেয়েরা পারবে, আর আপনি পারবেন না!"

 বিনয়ের উদ্ধারের আর কোনো উপায় রহিল না।


২১

গোরা তাহার স্বাভাবিক দ্রুতগতি পরিত্যাগ করিয়া অন্যমনস্কভাবে ধীরে ধীরে বাড়ি চলিল। বাড়ি যাইবার সহজ পথ ছাড়িয়া সে অনেকটা ঘুরিয়া গঙ্গার ধারের রাস্তা ধরিল। তখন কলিকাতার গঙ্গা ও গঙ্গার ধার বণিক্‌-সভ্যতার লাভলোলুপ কুশ্রীতায় জলে স্থলে আক্রান্ত হইয়া তীরে রেলের লাইন ও নীরে ব্রিজের বেড়ি পরে নাই। তখনকার শীতসন্ধ্যায় নগরের নিশ্বাসকালিমা আকাশকে এমন নিবিড় করিয়া আচ্ছন্ন করিত না। নদী তখন বহুদূর হিমালয়ের নির্জন গিরিশৃঙ্গ হইতে কলিকাতার ধূলিলিপ্ত ব্যস্ততার মাঝখানে শান্তির বার্তা বহন করিয়া আনিত।

 প্রকৃতি কোনোদিন গোরার মনকে আকর্ষণ করিবার অবকাশ পায় নাই। তাহার মন নিজের সচেষ্টতার বেগে নিজে কেবলই তরঙ্গিত হইয়া ছিল; যে জল স্থল আকাশ অব্যবহিতভাবে তাহার চেষ্টার ক্ষেত্র নহে তাহাকে সে লক্ষ্যই করে নাই।

১৭৫