পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গোরার নিরুদ্দেশ-ভ্রমণের অভিপ্রায় সম্বন্ধে বিনয় কোনো পরিষ্কার খবর বলিতে পারিল না।

 আনন্দময়ী কথায় কথায় জিজ্ঞাসা করিলেন, “কাল বুঝি তুমি গোরাকে নিয়ে পরেশবাবুর ওখানে গিয়েছিলে?”

 বিনয় গতকল্যকার সমস্ত ঘটনা বিবৃত করিয়া বলিল। আনন্দময়ী প্রত্যেক কথাটি সমস্ত অন্তঃকরণ দিয়া শুনিলেন।

 যাইবার সময় বিনয় কহিল, “মা, পূজা তো সাঙ্গ হল, এবার তোমার চরণের প্রসাদী ফুল দুটো মাথায় করে নিয়ে যেতে পারি?”

 আনন্দময়ী হাসিয়া গোলাপ ফুল দুইটি বিনয়ের হাতে দিলেন এবং মনে মনে ভাবিলেন, এ গোলাপ দুইটি যে কেবল সৌন্দর্যের জন্যই আদর পাইতেছে তাহা নহে— নিশ্চয় উদ্ভিদ্‌তত্ত্বের অতীত আরো অনেক গভীর তত্ত্ব ইহার মধ্যে আছে।

 বিকালবেলায় বিনয় চলিয়া গেলে তিনি কতই ভাবিতে লাগিলেন। ভগবানকে ডাকিয়া বার বার প্রার্থনা করিলেন— গোরাকে যেন অসুখী হইতে না হয় এবং বিনয়ের সঙ্গে তাহার বিচ্ছেদের যেন কোনো কারণ না ঘটে।


২২

গোলাপ ফুলের একটু ইতিহাস আছে।

 কাল রাত্রে গোরা তো পরেশবাবুর বাড়ি হইতে চলিয়া আসিল, কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়িতে সেই অভিনয়ে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব লইয়া বিনয়কে বিস্তর কষ্ট পাইতে হইয়াছিল।

 এই অভিনয়ে ললিতার যে কোনো উৎসাহ ছিল তাহা নহে, সে বরঞ্চ এ-সব ব্যাপার ভালোই বাসিত না। কিন্তু কোনোমতে বিনয়কে এই অভিনয়ে জড়িত করিবার জন্য তাহার মনের মধ্যে যেন একটা জেদ চাপিয়া

১৮৩