পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 তাহার শক্তির প্রতি বিনয়ের এই সন্দেহ দেখিয়া সতীশ ক্ষুব্ধ হইয়া কহিল, “কেন, আমি তো একলা যেতে পারি।” এই বলিয়া তাহার একলা যাতায়াতের অনেকগুলি বিস্ময়কর দৃষ্টান্তের সে উল্লেখ করিতে লাগিল। কিন্তু তবু যে বিনয় কেন তাহার বাড়ির দ্বার পর্যন্ত তাহার সঙ্গে গেল তাহার ঠিক কারণটি বালক বুঝিতে পারিল না।

 সতীশ জিজ্ঞাসা করিল, “আপনি ভিতরে আসবেন না?”

 বিনয় সমস্ত মনকে দমন করিয়া কহিল, “আর-একদিন আসব।”

 বাড়ি ফিরিয়া আসিয়া বিনয় সেই শিরোনাম-লেখা লেফাফা পকেট হইতে বাহির করিয়া অনেক ক্ষণ দেখিল— প্রত্যেক অক্ষরের টান ও ছাঁদ এক-রকম মুখস্থ হইয়া গেল; তার পরে টাকা-সমেত সেই লেফাফা বাক্সের মধ্যে যত্ন করিয়া রাখিয়া দিল। এ কয়টা টাকা যে কোনো দুঃসময়ে খরচ করিবে এমন সম্ভাবনা রহিল না।

 বর্ষার সন্ধ্যায় আকাশের অন্ধকার যেন ভিজিয়া ভারী হইয়া পড়িয়াছে। বর্ণহীন বৈচিত্র্যহীন মেঘের নিঃশব্দ শাসনের নীচে কলিকাতা শহর একটা প্রকাণ্ড নিরানন্দ কুকুরের মতো লেজের মধ্যে মুখ গুঁজিয়া কুণ্ডলী পাকাইয়া চুপ করিয়া পড়িয়া আছে। কাল সন্ধ্যা হইতে টিপ্ টিপ্ করিয়া কেবলই বর্ষণ হইয়াছে; সে বৃষ্টিতে রাস্তার মাটিকে কাদা করিয়া তুলিয়াছে কিন্তু কাদাকে ধুইয়া ভাসাইয়া লইয়া যাইবার মত বল প্রকাশ করে নাই। আজ বেলা চারটে হইতে বৃষ্টি বন্ধ আছে, কিন্তু মেঘের গতিক ভালো নয়। এইরূপ আসন্ন বৃষ্টির আশঙ্কায় সন্ধ্যাবেলায় নির্জন ঘরের মধ্যে যখন মন টেঁকে না এবং বাহিরেও যথন আরাম পাওয়া যায় না সেই সময়টাতে দুটি লোক একটি তেতলা বাড়ির স্যাঁৎসেঁতে ছাতে দুটি বেতের মোড়ার উপর বসিয়া আছে।

১৪