পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রান্তে উপরি উপরি বাজিতে লাগিল।

 সতীশ তাড়াতাড়ি উঠিয়া বিনয়ের হাত ধরিয়া ঝুলিয়া পড়িয়া মিনতির স্বরে কহিল, “বিনয়বাবু, বসুন, এখনই যাবেন না। আমাদের বাড়িতে আজ খেয়ে যান। মাসিমা, বিনয়বাবুকে খেতে বলো-না। ললিতাদিদি, কেন বিনয়বাবুকে যেতে বললে!"

 বিনয় কহিল, “ভাই সতীশ, আজ না ভাই! মাসিমা যদি মনে রাখেন তবে আর-এক দিন এসে প্রসাদ খাব। আজ দেরি হয়ে গেছে।”

 কথাগুলো বিশেষ কিছু নয়, কিন্তু কণ্ঠস্বরের মধ্যে অশ্রু আচ্ছন্ন হইয়া ছিল। তাহার করুণা সতীশের মাসিমার কানেও বাজিল। তিনি একবার বিনয়ের ও একবার ললিতার মুখের দিকে চকিতের মতো চাহিয়া লইলেন— বুঝিলেন, অদৃষ্টের একটা লীলা চলিতেছে।

অনতিবিলম্বে কোনো ছুতা করিয়া ললিতা উঠিয়া তাহার ঘরে গেল। কত দিন সে নিজেকে নিজে এমন করিয়া কাঁদাইয়াছে।


৩২

বিনয় তখনই আনন্দময়ীর বাড়ির দিকে চলিল। লজ্জায় বেদনায় মিশিয়া মনের মধ্যে ভারি একটা পীড়ন চলিতেছিল। এতক্ষণ কেন সে মার কাছে যায় নাই! কী ভুলই করিয়াছিল! সে মনে করিয়াছিল তাহাকে ললিতার বিশেষ প্রয়োজন আছে। সব প্রয়োজন অতিক্রম করিয়া সে যে কলিকাতায় আসিয়াই আনন্দময়ীর কাছে ছুটিয়া যায় নাই সেজন্য ঈশ্বর তাহাকে উপযুক্ত শাস্তিই দিয়াছেন। অবশেষে আজ ললিতার মুখ হইতে এমন প্রশ্ন শুনিতে হইল, “গৌরবাবুর মার কাছে একবার যাবেন না?' কোনো এক মুহূর্তেও এমন বিভ্রম ঘটিতে পারে যখন গৌরবাবুর মার কথা বিনয়ের চেয়ে ললিতার মনে বড়ো হইয়া উঠে! ললিতা তাঁহাকে গৌরবাবুর মা বলিয়া জানে মাত্র, কিন্তু বিনয়ের কাছে তিনি যে জগতের সকল মায়ের একটিমাত্র প্রত্যক্ষ

১৭
২৫৭