পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাথর হয়ে যাবে।”

 এই বলিয়া বস্ত্রাঞ্চলে হরিমোহিনী দুই চক্ষু মুছিলেন।


৪০

সুচরিতা নীচের ঘরে আসিয়া হারানবাবুর সম্মুখে দাঁড়াইল— কহিল, “আপনার কী কথা আছে বলুন।”

 হারানবাবু কহিলেন, “বসো।”

 সুচরিতা বসিল না, স্থির দাঁড়াইয়া রহিল।

 হারানবাবু কহিলেন, “সুচরিতা, তুমি আমার প্রতি অন্যায় করছ।”

 সুচরিতা কহিল, “আপনিও আমার প্রতি অন্যায় করছেন।”

 হারানবাবু কহিলেন, “কেন, আমি তোমাকে যা কথা দিয়েছি এখনো তা—"

 সুচরিতা মাঝখানে বাধা দিয়া কহিল, “ন্যায় অন্যায় কি শুধু কেবল কথায়? সেই কথার উপর জোর দিয়ে আপনি কাজে আমার প্রতি অত্যাচার করতে চান? একটা সত্য কি সহস্র মিথ্যার চেয়ে বড়ো নয়? আমি যদি এক শো বার ভুল করে থাকি তবে কি আপনি জোর করে আমার সেই ভুলকেই অগ্রগণ্য করবেন? আজ আমার যখন সেই ভুল ভেঙেছে তখন আমি আমার আগেকার কোনো কথাকে স্বীকার করব না— করলে আমার অন্যায় হবে।”

 সুচরিতার যে এমন পরিবর্তন কী করিয়া সম্ভব হইতে পারে তাহা হারানবাবু কোনোমতেই বুঝিতে পারিলেন না। তাহার স্বাভাবিক স্তব্ধতা ও নম্রতা আজ এমন করিয়া ভাঙিয়া গেছে ইহা যে তাঁহারই দ্বারা ঘটিতে পারে তাহা অনুমান করিবার শক্তি ও বিনয় তাঁহার ছিল না। সুচরিতার নূতন সঙ্গীগুলির প্রতি মনে মনে দোষারোপ করিয়া তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কী ভুল করেছিলে?”

 সুচরিতা কহিল, “সে কথা কেন আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন? পূর্বে মত

৩১৯