পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সকল পক্ষের প্রতি তীক্ষ্ণ খোঁজা দিয়া নিতান্ত অপমানকর কথা কতকগুলা বলিয়া চলিয়া গেলেন। তিনি বুঝাইয়া গেলেন, বিনয়কে এইরূপ ফাঁদে ফেলিয়া সর্বনাশ করিবার জন্যই পরেশবাবুর ঘরে একটা নির্লজ্জ আয়োজন চলিতেছিল, বিনয় নির্বোধ বলিয়াই এমন ফাঁদে সে আটকা পড়িয়াছে, ভোলাক দেখি ওরা গোরাকে, তবে তো বুঝি। সে বড়ো শক্ত জায়গা।

 বিনয় চারি দিকেই এইরূপ লাঞ্ছনার মূর্তি দেখিয়া স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। আনন্দময়ী কহিলেন, “জানিস, বিনয়, তোর কী কর্তব্য?”

 বিনয় মুখ তুলিয়া তাঁহার মুখের দিকে চাহিল। আনন্দময়ী কহিলেন, “তোর উচিত একবার পরেশবাবুর কাছে যাওয়া। তাঁর সঙ্গে কথা হলেই সমস্ত পরিষ্কার হয়ে যাবে।”



৫১

সুচরিতা হঠাৎ আনন্দময়ীকে দেখিয়া আশ্চর্য হইয়া কহিল, “আমি যে এখনই আপনার ওখানে যাব বলে প্রস্তুত হচ্ছিলুম।”

 আনন্দময়ী হাসিয়া কহিলেন, “তুমি যে প্রস্তুত হচ্ছিলে তা আমি জানতুম না, কিন্তু যেজন্যে প্রস্তুত হচ্ছিলে সেই খবরটা পেয়ে আমি থাকতে পারলুম না, চলে এলুম।”

 আনন্দময়ী খবর পাইয়াছেন শুনিয়া সুচরিতা আশ্চর্য হইয়া গেল। আনন্দময়ী কহিলেন, “মা, বিনয়কে আমি আমার আপন ছেলের মতোই জানি। সেই বিনয়ের সম্পর্ক থেকেই তোমাদের যখন নাও জেনেছি তখনই তোমাদের মনে মনে কত আশীর্বাদ করেছি। তোমাদের প্রতি কোনো অন্যায় হচ্ছে এ কথা শুনে আমি স্থির থাকতে পারি কই? আমার দ্বারা তোমাদের কোনো উপকার হতে পারবে কি না তা তো জানি নে— কিন্তু মনটা কেমন করে উঠল, তাই তোমাদের কাছে ছুটে এলুম। মা, বিনয়ের তরফে কি কোনো অন্যায় ঘটেছে?”

৩৮৬