পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কথা স্মরণ করিল।

 এমন সময় হারানবাবু হঠাৎ টেবিলের উপর হইতে একটা বই তুলিয়া লইলেন, এবং সেটা খুলিয়া প্রথমে লেখকের নাম দেখিয়া লইলেন, তাহার পরে বইখানা যেখানে-সেখানে খুলিয়া চোখ বুলাইতে লাগিলেন।

 সুচরিতা লাল হইয়া উঠিল। বইখানি কী তাহা গোরা জানিত, তাই গোরা মনে মনে একটু হাসিল।

 হারানবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, “গৌরমোহনবাবু, আপনার এ বুঝি ছেলেবেলাকার লেখা?”

 গোরা হাসিয়া কহিল, “সে ছেলেবেলা এখনো চলছে। কোনো কোনো প্রাণীর ছেলেবেলা অতি অল্পদিনেই ফুরিয়ে যায়, কারও কারও ছেলেবেলা কিছু দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়।”

 সুচরিতা চৌকি হইতে উঠিয়া কহিল, “গৌরমোহনবাবু, আপনার খাবার এত ক্ষণে তৈরি হয়েছে। আপনি তা হলে ও ঘরে একবার চলুন। মাসি আবার পানুবাবুর কাছে বের হবেন না, তিনি হয়তো আপনার জন্যে অপেক্ষা করছেন।”

 এই শেষ কথাটা সুচরিতা হারানবাবুকে বিশেষ করিয়া আঘাত করিবার জন্যই বলিল। সে আজ অনেক সহিয়াছে, কিছু ফিরাইয়া না দিয়া থাকিতে পারিল না।

 গোরা উঠিল। অপরাজিত হারানবাবু কহিলেন, “আমি তবে অপেক্ষা করি?”

 সুচরিতা কহিল, “কেন মিথ্যা অপেক্ষা করবেন, আজ আর সময় হয়ে উঠবে না।”

 কিন্তু হারানবাবু উঠিলেন না। সুচরিতা ও গোরা ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল।

 গোরাকে এ বাড়িতে দেখিয়া ও তাহার প্রতি সুচরিতার ব্যবহার লক্ষ করিয়া হারানবাবুর মন সশস্ত্র জাগিয়া উঠিল। ব্রাহ্মসমাজ হইতে সুচরিতা

২৯
৪৪৯