পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 উভয়ে প্রায় বিশ মিনিট ধরিয়া যে কথাবার্তা কহিয়াছিল তাহার সারমর্মটুকু এই দাঁড়ায়। তাহারা হিন্দু কি ব্রাহ্ম এ কথা তাহারা ভুলিল, তাহারা যে দুই মানবাত্মা এই কথাই তাহাদের মনের মধ্যে নিষ্কম্প প্রদীপশিখার মতো জ্বলিতে লাগিল।

৫৯

পরেশবাবু উপাসনার পর তাঁহার ঘরের সম্মুখের বারান্দায় স্তব্ধ হইয়া বসিয়া ছিলেন। সূর্য সদ্য অস্ত গিয়াছে।

 এমন সময় ললিতাকে সঙ্গে লইয়া বিনয় সেখানে প্রবেশ করিল ও ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিয়া পরেশের পদধূলি লইল।

 পরেশ উভয়কে এভাবে প্রবেশ করিতে দেখিয়া কিছু বিস্মিত হইলেন। কাছে বসিতে দিবার চৌকি ছিল না; তাই বলিলেন, “চলো, ঘরে চলো।” বিনয় কহিল, “না, আপনি উঠবেন না।” বলিয়া সেইখানে ভূমিতলেই বসিল। ললিতাও একটু সরিয়া পরেশের পায়ের কাছে বসিয়া পড়িল।

 বিনয় কহিল, “আমরা দুজনে একত্রে আপনার আশীর্বাদ নিতে এসেছি। সেই আমাদের জীবনের সত্যদীক্ষা হবে।”

 পরেশবাবু বিস্মিত হইয়া তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন।

 বিনয় কহিল, “বাঁধা নিয়মে বাঁধা কথায় সমাজে প্রতিজ্ঞাগ্রহণ আমি করব। যে দীক্ষায় আমাদের দুজনের জীবন নত হয়ে সত্যবন্ধনে বদ্ধ হবে সেই দীক্ষা আপনার আশীর্বাদ। আমাদের দুজনেরই হৃদয় ভক্তিতে আপনারই পায়ের কাছে প্রণত হয়েছে, আমাদের যা মঙ্গল তা ঈশ্বর আপনার হাত দিয়েই দেবেন।”

 পরেশবাবু কিছু ক্ষণ কোনো কথা না বলিয়া স্থির হইয়া রহিলেন। পরে কহিলেন, “বিনয়, তুমি তা হলে ব্রাহ্ম হবে না?”

 বিনয় কহিল, “না।”

৪৫৮