পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 হরিমোহিনী কহিলেন, “আচ্ছা, ওই নাহয় ব্রাহ্মসমাজে আছে, কিন্তু তুমি তো এসব কখনো ভালো বলো না। তোমার কথা শুনে আজকালকার কত লোকের চৈতন্য হচ্ছে, আর তোমার ব্যবহার এরকম হলে লোকে তোমাকে মানবে কেন! এই-যে কাল রাত্রি পর্যন্ত ওর সঙ্গে তুমি কথা কয়ে গেলে, তাতেও তোমার কথা শেষ হল না, আবার আজ সকালেই এসেছ! সকাল থেকে ও আজ না গেল ভাঁড়ারে, না গেল রান্নাঘরে- আজ একাদশীর দিনে আমাকে যে একটু সাহায্য করবে তাও ওর মনে হল না, এ ওর কী রকম শিক্ষা হচ্ছে। তোমাদের নিজের ঘরেও তো মেয়ে আছে তাদের নিয়ে কি সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ করে তুমি এইরকম শিক্ষা দিচ্ছ, না আর-কেউ দিলে তুমি ভালো বোধ কর?”

 গোরার তরফে এ-সব কথার কোনো উত্তর ছিল না। সে কেবল কহিল, “ইনি এইরকম শিক্ষাতেই মানুষ হয়েছেন ব’লে আমি এঁর সম্বন্ধে কিছু বিবেচনা করি নি।”

 হরিমোহিনী কহিলেন, “ও যে-শিক্ষাই পেয়ে থাক্‌, যতদিন আমার কাছে আছে আর আমি বেঁচে আছি এ-সব চলবে না। ওকে আমি অনেকটা ফিরিয়ে এনেছি। ও যখন পরেশবাবুর বাড়িতে ছিল তখনই তো আমার সঙ্গে মিশে ও হিঁদু হয়ে গেছে রব উঠেছিল। তার পরে এ বাড়িতে এসে তোমাদের বিনয়ের সঙ্গে কী জানি কী সব কথাবার্তা হতে লাগল, আবার সব উল্‌টে গেল। তিনি তো আজ ব্রাহ্মঘরে বিয়ে করতে যাচ্ছেন। যাক, অনেক কষ্টে বিনয়কে তো বিদায় করেছি। তার পরে হারানবাবু বলে একটি লোক আসত; সে এলেই আমি রাধারানীকে নিয়ে আমার উপরের ঘরে বসতুম, সে আর আমল পেল না। এমনি করে অনেক দুঃখে ওর আজকাল আবার যেন একটু মতি ফিরেছে বলে বোধ হচ্ছে। এ বাড়িতে এসে ও আবার সকলের ছোঁওয়া খেতে আরম্ভ করেছিল, কাল দেখলুম সেটা বন্ধ করেছে। কাল রান্নাঘর থেকে নিজের ভাত নিজেই নিয়ে গেল, বেহারকে জল আনতে বারণ করে দিলে। এখন, বাপু, তোমার কাছে

৪৯২