পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ভগবানের কাছে দুবেলা হাত জোড় করে মাপ চাচ্ছি, তিনি শাস্তি যা দিতে চান সব আমাকেই যেন দেন, কিন্তু আমার কেবল ভয় হচ্ছে- আর বুঝি ঠেকিয়ে রাখতে পারা যাবে না, গোরাকে নিয়ে বিপদ হবে। এইবার আমাকে অনুমতি দাও, আমার কপালে যা থাকে ওকে আমি সব কথা খুলে বলি।”

 কৃষ্ণদয়ালের তপস্যা ভাঙিবার জন্য ইন্দ্রদেব এ কী বিঘ্ন পাঠাইতেছেন! তপস্যাও সম্প্রতি খুব ঘোরতর হইয়া উঠিয়াছে- নিশ্বাস লইয়া অসাধ্যসাধন হইতেছে, আহারের মাত্রাও ক্রমে এতটা কমিয়াছে যে পেটকে পিঠের সহিত এক করিবার পণ রক্ষা হইতে আর বড়ো বিলম্ব নাই। এমন সময় এ কী উৎপাত!

 কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “তুমি কি পাগল হয়েছ। এ কথা আজ প্রকাশ হলে আমাকে যে বিষম জবাবদিহিতে পড়তে হবে- পেন্‌শন তো বন্ধ হবেই, হয়তো পুলিসে টানাটানি করবে। যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে, যতটা সামলে চলতে পার চলো- না পার তাতেও বিশেষ কোনো দোষ হবে না।”

 কৃষ্ণদয়াল ঠিক করিয়া রাখিয়াছিলেন তাঁহার মৃত্যুর পর যা হয় তা হোক, ইতিমধ্যে তিনি নিজে স্বতন্ত্র হইয়া থাকিবেন। তার পরে অজ্ঞাতসারে অন্যের কী ঘটিতেছে সে দিকে দৃষ্টিপাত না করিলেই এক-রকম চলিয়া যাইবে।

 কী করা কর্তব্য কিছুই স্থির করিতে না পারিয়া বিমর্ষমুখে আনন্দময়ী উঠিলেন। ক্ষণকাল দাঁড়াইয়া কহিলেন, “তোমার শরীর কিরকম হয়ে যাচ্ছে দেখছ না?”

 আনন্দময়ীর এই মূঢ়তায় কৃষ্ণদয়াল অত্যন্ত উচ্চভাবে একটুখানি হাস্য করিলেন এবং কহিলেন, “শরীর!”

 এ সম্বন্ধে আলোচনা কোনো সন্তোষজনক সিদ্ধান্তে আসিয়া পৌঁছিল না, এবং কৃষ্ণদয়াল পুনশ্চ ঘেরণ্ডসংহিতায় মনোনিবেশ করিলেন। এ দিকে তাঁহার সন্ন্যাসীটিকে লইয়া মহিম তখন বাহিরের ঘরে বসিয়া অত্যন্ত উচ্চ অঙ্গের পরমার্থতত্ত্ব আলোচনায় প্রবৃত্ত ছিলেন। গৃহীদের মুক্তি আছে কি না

৫০৬