এই কথায় হরিমোহিনীর গা জ্বলিয়া গেল, কিন্তু এখন কোনো কথা বলা তিনি সুযুক্তি বলিয়া বোধ করিলেন না।
সুচরিতা আনন্দময়ীর কাছে আসিয়া হাস্যমুখে কহিল, “মা, আমি তবে একবার বাড়ি হয়ে আসি।”
আনন্দময়ী কোনো প্রশ্ন না করিয়া কহিলেন, “তা, এসো মা।”
সুচরিতা ললিতার কানে কানে কহিল, “আজ আবার দুপুরবেলা আমি আসব।”
পালকির সামনে দাঁড়াইয়া সুচরিতা কহিল, “সতীশ?”
হরিমোহিনী কহিলেন, “সতীশ থাক্-না।”
সতীশ বাড়ি গেলে বিঘ্নস্বরূপ হইয়া উঠিতে পারে, এই মনে করিয়া সতীশের দূরে অবস্থানই তিনি সুযোগ বলিয়া গণ্য করিলেন।
দুই জনে পাল্কিতে চড়িলে পর হরিমোহিনী ভূমিকা ফাঁদিবার চেষ্টা করিলেন। কহিলেন, “ললিতার তো বিয়ে হয়ে গেল। তা বেশ হল, একটি মেয়ের জন্যে তো পরেশবাবু নিশ্চিন্ত হলেন।”
এই বলিয়া ঘরের মধ্যে অবিবাহিত মেয়ে যে কত বড় একটা দায়, অভিভাবকগণের পক্ষে যে কিরূপ দুঃসহ উৎকণ্ঠার কারণ তাহা প্রকাশ করিলেন।
“কী বলব তোমাকে, আমার আর অন্য ভাবনা নেই। ভগবানের নাম করতে করতে ওই চিন্তাই মনে এসে পড়ে। সত্য বলছি, ঠাকুর-সেবায় আমি আগেকার মতো তেমন মন দিতেই পারি নে। আমি বলি, গোপীবল্লভ, সব কেড়েকুড়ে নিয়ে এ আবার আমাকে কী নূতন ফাঁদে জড়ালে!”
হরিমোহিনীর এ যে কেবলমাত্র সাংসারিক উৎকণ্ঠা তাহা নহে, ইহাতে তাঁহার মুক্তিপথের বিঘ্ন হইতেছে। তবু এত বড় গুরুতর সংকটের কথা, শুনিয়াও সুচরিতা চুপ করিয়া রহিল; তাহার ঠিক মনের ভাবটি কী হরিমোহিনী তাহা বুঝিতে পারিলেন না। মৌন সম্মতিক্ষণ বলিয়া যে একটি বাঁধা কথা আছে সেইটেকেই তিনি নিজের অনুকুলে গ্রহণ করিলেন।
৫৫৬