পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

তাঁহার মনে হইল, সুচরিতার মন যেন একটু নরম হইয়াছে।

 সুচরিতার মতো মেয়ের পক্ষে হিন্দুসমাজে প্রবেশের ন্যায় এত বড় দুরূহ ব্যাপারকে হরিমোহিনী নিতান্তই সহজ করিয়া আনিয়াছেন, এরূপ তিনি আভাস দিলেন। এমন একটি সুযোগ একেবারে আসন্ন হইয়াছে যে, বড়ো বড়ো কুলীনের ঘরে নিমন্ত্রণে এক পঙ্‌ক্তিতে আহারের উপলক্ষে কেহ তাহাকে টুঁশব্দ করিতে সাহস করিবে না।

 ভূমিকা এই পর্যন্ত অগ্রসর হইতেই পাল্‌কি বাড়িতে আসিয়া পৌছিল। উভয়ে দ্বারের কাছে নামিয়া বাড়িতে প্রবেশ করিয়া উপরে যাইবার সময় সুচরিতা দেখিতে পাইল, দ্বারের পাশের ঘরে একটি অপরিচিত লোক বেহারাকে দিয়া প্রবল করতাড়ন-শব্দ-সহযোগে তৈল মর্দন করিতেছে। সে তাহাকে দেখিয়া কোনো সংকোচ মানিল না, বিশেষ কৌতুহলের সহিত তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিল।

 উপরে গিয়া হরিমোহিনী তাঁহার দেবরের আগমন-সংবাদ সুচরিতাকে জানাইলেন। পূর্বের ভূমিকার সহিত মিলাইয়া লইয়া সুচরিতা এই ঘটনাটির অর্থ ঠিকমতই বুঝিল। হরিমোহিনী তাহাকে বুঝাইবার চেষ্টা করিলেন-বাড়িতে অতিথি আসিয়াছে, এমন অবস্থায় তাহাকে ফেলিয়া আজই মধ্যাহ্নে চলিয়া যাওয়া তাহার পক্ষে ভদ্রাচার হইবে না।

 সুচরিতা খুব জোরের সঙ্গে ঘাড় নাড়িয়া কহিল, “না মাসি, আমাকে যেতেই হবে।”

 হরিমোহিনী কহিলেন, “তা বেশ তো, আজকের দিনটা থেকে তুমি কাল যেয়ো।”

 সুচরিতা কহিল, “আমি এখনই স্নান করেই বাবার ওখানে খেতে যাব, সেখান থেকে ললিতার বাড়ি যাব।”

 তখন হরিমোহিনী স্পষ্ট করিয়াই কহিলেন, “তোমাকেই যে দেখতে এসেছে।”

 সুচরিতা মুখ রক্তিম করিয়া কহিল, “আমাকে দেখে লাভ কী!”

৫৫৭