পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

কাপড় লইয়া পড়িল। তাহার চোখ দিয়া টপ্ টপ্ করিয়া জল পড়িতে লাগিল।


৭৫

গোরা লিখনটি লিখিয়া যখন হরিমোহিনীর হাতে দিল তখন তাহার মনে হইল, সুচরিতা সম্বন্ধে সে যেন ত্যাগপত্র লিখিয়া দিল। কিন্তু দলিল লিখিয়া দিলেই তো তখনই কাজ শেষ হয় না। তাহার হৃদয় যে সে দলিলকে একেবারে অগ্রাহ্য করিয়া দিল। সে দলিলে কেবল গোরার ইচ্ছাশক্তি জোর কলমে নাম সই করিয়া দিয়াছিল বটে, কিন্তু তাহার হৃদয়ের স্বাক্ষর তো তাহাতে ছিল না— হৃদয় তাই অবাধ্য হইয়াই রহিল। এমনি ঘোরতর অবাধ্যতা যে, সেই রাত্রেই গোরাকে একবার সুচরিতার বাড়ির দিকে দৌড় করাইয়াছিল আর-কি! কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই গির্জার ঘড়িতে দশটা বাজিল এবং গোরার চৈতন্য হইল, এখন কাহারও বাড়িতে গিয়া দেখা করিবার সময় নয়। তাহার পরে গির্জার প্রায় সকল ঘড়িই গোরা শুনিয়াছে। কারণ, বালির বাগানে সে রাত্রে তাহার যাওয়া ঘটিল না। পরদিন প্রত্যুষে যাইবে বলিয়া সংবাদ পাঠাইয়াছে।

 প্রত্যুষেই বাগানে গেল, কিন্তু যে-প্রকার নির্মল ও বলশালী মন লইয়া সে প্রায়শ্চিত্ত গ্রহণ করিবে স্থির করিয়াছিল সেরকম মনের অবস্থা তাহার কোথায়!

 অধ্যাপক-পণ্ডিতেরা অনেকে আসিয়াছেন। আরও অনেকের আসিবার কথ। গোরা সকলের সংবাদ লইয়া সকলকে শিষ্টসম্ভাষণ করিয়া আসিল। তাঁহারা গোরার সনাতন ধর্মের প্রতি অচল নিষ্ঠার কথা বলিয়া বার বার সাধুবাদ করিলেন।

 বাগান ক্রমেই কোলাহলে পূর্ণ হইয়া উঠিল। গোরা চারি দিক তত্ত্বাবধান করিয়া বেড়াইতে লাগিল। কিন্তু সমস্ত কোলাহল এবং কাজের ব্যস্ততার

৫৮১