গৌড়রাজমালা।
তুরূষ্কগণের আক্রমণ-বেগ সহ্য করিতে হইয়াছিল। ১২২০ সম্বতের [১১৬৪ খৃষ্টাব্দের] দিল্লী-শিবালিক স্তম্ভ-লিপিতে উক্ত হইয়াছে—চৌহান-রাজ বীসলদেব
आर्य्यावर्त्तं यथार्थं पुनरपि कृतवान् म्लेच्छ-चिच्छेदनाभिः।”[১]
“ম্লেচ্ছ নাশ করিয়া, আর্য্যাবর্ত্তের নাম পুনরায় যথার্থ করিয়াছিলেন।” প্রশস্তিকার হয়ত এখানে চৌহানরাজ্য-অর্থে “আর্য্যাবর্ত্ত” শব্দের ব্যবহার করিয়াছেন। কারণ, বীসলদেব বা অন্য কোন হিন্দু-নরপতি কখনও পঞ্জাব আক্রমণ করিয়াছিলেন, গজনবী সুলতানগণের ইতিহাসে এরূপ আভাস পাওয়া যায় না। ১২২৪ সম্বতের [১১৬৮ খৃষ্টাব্দের] গাহড়বাল-রাজ বিজয়চন্দ্রের [কমৌলীতে প্রাপ্ত] তাম্রশাসনে তিনি
भुवन-दलन-हेलाहर्म्य हम्मीर-नारी-
नयनजलद-धारा-धौत-भूलोक-तापः”[২]
“হেলায় ভুবনদলক্ষম হম্মীরের নারীগণের নয়ন-জলধারা দ্বারা ভূলোকের তাপ-ধৌতকারী” বলিয়া বর্ণিত হইয়াছেন। “হম্মীর” এ স্থলে আমীর বা গজনবী-সুলতান অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে। চৌহান বীসলদেব এবং গাহড়বাল বিজয়চন্দ্রের সময়ের গজনবী-সুলতান খুসরু শাহ, গজনী হইতে তাড়িত হইয়া আসিয়া, লাহোরে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন। কিন্তু এরূপ দুরবস্থায় পতিত হইয়াও, তিনি তুরূষ্কের স্বভাবগত অগ্রগমনশীলতা ত্যাগ করিতে পারিয়াছিলেন না; সম্ভবত চৌহান এবং গাহড়বাল, এই উভয় রাজ্যই, একবার একবার আক্রমণ করিয়াছিলেন। তুরূষ্ক-যোদ্ধৃগণ এযাবৎ গাহড়বাল-রাজ্য জয় করিতে অসমর্থ হইলেও, তুরূষ্ক-ঔপনিবেশিকগণ রাজ্যের নানা স্থানে প্রবেশলাভ করিয়াছিল। গাহড়বাল-রাজ চন্দ্রদেবের, মদনচন্দ্রের, গোবিন্দচন্দ্রের এবং বিজয়চন্দ্রের অনেক তাম্রশাসনে “তুরূষ্ক-দণ্ড” নামক রাজকরের উল্লেখ দৃষ্ট হয়। “তুরূষ্ক-দণ্ড” নাম হইতে বুঝিতে পারা যায়,—তুরূষ্ক-প্রজাগণকে এই বিশেষ কর প্রদান করিতে হইত।
১১৬৮ কি ১১৬৯ খৃষ্টাব্দে, শেষ গজনবী-সুলতান খুসরু-মালিক, লাহোরের সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন; ১১৭০ খৃষ্টাব্দে গাহড়বাল জয়চ্চন্দ্র কান্যকুব্জের সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন; ১১৭০ হইতে ১১৮২ খৃষ্টাব্দের মধ্যে কোন সময়ে, চৌহান দ্বিতীয় পৃথ্বিরাজ আজমীরের সিংহাসনে অভিষিক্ত হইয়াছিলেন; এবং ১১৭৩ খৃষ্টাব্দে সুলতান ঘিয়াসুদ্দীন ঘোরী গজনীনগর অধিকার করিয়া, অনুজ মুইজুদ্দীন মহম্মদ ঘোরীকে সুলতান মামুদের সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন। মহম্মদ-ঘোরী পরাজয়েও পরাঙ্মুখ না হইয়া, কেমন করিয়া একে একে এই সকল প্রতিদ্বন্দীকে বিনাশ করিয়া হিন্দুস্থানে আধিপতা স্থাপন করিয়াছিলেন, তাহার বর্ণন এখানে নিষ্প্রয়োজন।
- ↑ Indian Antiquary, Vol. XIX, p. 215. মনুসংহিতার (২৷২২ শ্লোকের) ভাষ্যে মেধাতিথি আর্য্যাবর্ত্তের এই রূপ অর্থ লিখিয়াছেন—“आर्य्या वर्त्तन्ते यत्र पुनः पुनरूद्भवम्त्राकस्याकस्यापि न चिरं यत्र म्लेच्छाः स्यातारी भवन्ति।” প্রশস্তিকার এইরূপ অর্থেই এখানে আর্য্যাবর্ত্ত-শব্দের ব্যবহার করিয়াছেন।
- ↑ Epigraphia Indica, Vol. IV, p. 119.
৭০