পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহম্মদ-ই-বখ্‌তিয়ার।

লাহোরের সুলতান, দিল্লী ও আজমীরের চৌহানরাজ এবং কনোজের গাহড়বালরাজ [সমবেত ভাবে না হউক] স্বতন্ত্র ভাবে আক্রমণকারীর গতিরোধার্থ যথেষ্ট চেষ্টা করিয়াছিলেন। ইঁহাদিগের দমনার্থ মহম্মদ ঘোরীকে পুনঃ পুনঃ গজনী ত্যাগ করিয়া হিন্দুস্থানে আসিতে হইয়াছিল। কিন্তু শশাঙ্ক, ধর্ম্মপাল, দেবপাল এবং মহীপালের গৌড়রাষ্ট্র [একরূপ নির্ব্বিবাদে] মহম্মদঘোরীর একজন দাসানুদাসকে রাজপদে বরণ করিয়াছিল।

 মহম্মদ-ই-বখ্‌তিয়ার নামক খল্‌জ্ বা খিলজি বংশীয় একজন তুরূষ্ক, মুইজুদীন মহম্মদের সেনাশ্রেণীতে কর্ম্মের অনুসন্ধানে, গজনী গমন করিয়াছিলেন। মহম্মদের চেহারা পছন্দসহি না হওয়ায়, সেনাসংগ্রহ-বিভাগের প্রধান কর্ম্মচারী তাঁহাকে একটি অল্প বেতনের কর্ম্ম দিতে চাহিয়াছিলেন। মহম্মদ-ই-বখ্‌তিয়ার প্রস্তাবিত কর্ম্ম গ্রহণ না করিয়া হিন্দুস্থানে—দীল্লিতে গমন করিলেন। মহম্মদঘোরীর প্রতিনিধি কুতবুদ্দীন তখন দীল্লীতে অবস্থান করিতেছিলেন। দীল্লীতেও মহম্মদের আকৃতি তাঁহার মনোমত পদপ্রাপ্তির অন্তরায় হইয়া দাঁড়াইল। হতাশ হইয়া, মহম্মদ অযোধ্যায় গিয়া, মালিক হুসামুদ্দীন আগুল্‌বকের শরণাগত হইলেন। হুসামুদ্দীন মহম্মদের ক্ষিপ্রকারিতার এবং সাহসের পরিচয় পাইয়া, তাঁহাকে “ভগবত” এবং “ভিউলি” নামক দুইটি পরগণা জায়গীর দান করিয়াছিলেন। মহম্মদ-ই-বখ্‌তিয়ারের জায়গীর দক্ষিণ বিহার বা মগধের পশ্চিম সীমা কর্ম্মনাশা নদীর পশ্চিমে, চুনারগড়ের নিকটে অবস্থিত ছিল। এখান হইতে মহম্মদ মাঝে মাঝে মগধে (বিহারে) প্রবেশ করিয়া, গ্রাম লুটপাট আরম্ভ করিলেন; এবং লুণ্ঠিত অর্থের দ্বারা ক্রমশঃ যুদ্ধের অশ্ব, অস্ত্রশস্ত্র, এবং সেনা সংগ্রহ করিতে লাগিলেন। তাঁহার বীরত্বের খ্যাতি চারিদিকে ব্যাপ্ত হইলে, হিন্দুস্থানের যত খল্‌জ্ বা খিলজি-বংশীয় তুরূষ্ক ছিল, তাহারা আসিয়া তাঁহার সহিত মিলিত হইল। সুলতান কুতবুদ্দীন মহম্মদ-ই-বখ্‌তিয়ারের সুখ্যাতি শুনিয়া, তাঁহাকে খিলাত পাঠাইয়া দিলেন। প্রোৎসাহিত হইয়া, মহম্মদ পুনঃ পুনঃ “বিলায়ৎ বিহার” আক্রমণ করিয়া, অনেক স্থান লুণ্ঠন করিতে লাগিলেন। “এক দো সাল” এইরূপ আক্রমণ ও লুণ্ঠন চলিল।

 অবশেষে মহম্মদ বিহার দুর্গ অধিকার করিতে মনস্থ করিলেন। এই “কিল্লা-বিহার” পাটনা জেলার অন্তর্গত বর্ত্তমান বিহার মহকুমার প্রধান নগর বিহার বলিয়া অনুমিত হয়। মহম্মদ-ই-বখ্‌তিয়ার কর্ত্তৃক “বিহার-দুর্গ”, এবং তৎপর বৎসর, “নোদিয়া” অধিকারের সময় লইয়া, পণ্ডিতগণের মধ্যে মতভেদ আছে। রেভার্টির মতে, মহম্মদ-ই-বখ্‌তিয়ার ১১৯৩ খৃষ্টাব্দে বিহার-দুর্গ অধিকার করিয়াছিলেন।[] ব্লক্‌ম্যান এই ঘটনা ১১৯৭ কি ১১৯৮ খৃষ্টাব্দে স্থাপন করিতে চাহেন। ব্লক্‌ম্যানের অনুমানই সমীচীনতর বোধ হয়। “বিহার” এবং “নোদিয়া” অধিকারের বিবরণ সম্বন্ধে আমাদের প্রধান অবলম্বন—মিন্‌হাজুদ্দীনের “তবকাত্-ই-নাসিরি” নামক পারস্য ভাষায় রচিত ইতিহাস গ্রন্থ।

  1. Raverty's Tabakat-i-Nasiri, App. D.

৭১