গৌড়রাজমালা।
হইয়া, আশীর্ব্বাদ করিয়াছেন;—“আল্লা [নরকে] তাঁহার শাস্তির লাঘব করুন।”[১] এই “রায় লখ্মনিয়া” কে, তদ্বিষয়ে পণ্ডিত-সমাজে বিস্তর মতভেদ আছে। মিন্হাজুদ্দীনের “রায় লখ্মনিয়া” গৌড়াধিপ লক্ষ্মণসেনের নামের অপভ্রংশ বলিয়াই বোধ হয়। মিন্হাজুদ্দীন লখ্মনিয়ার যে জীবনী লিপিবদ্ধ করিয়াছেন, তাহা তিনি “বিশ্বাসী লোকের” উক্তি (সেফাৎ রোয়াৎ) বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। জনশ্রুতির বাহক এই সকল “বিশ্বাসী লোক” যাঁহাকে ভক্তির চক্ষে দেখেন, তাঁহার জীবনীকে অনেক অলৌকিক ঘটনায় সাজাইতে ভাল বাসেন। মিন্হাজুদ্দীন-লিখিত লক্ষ্মণসেনের জন্মবৃত্তান্ত, জন্মমাত্র রাজ্যাভিষেক, এবং সুদীর্ঘ-রাজ্যশাসন-কাহিনী “বিশ্বাসী লোকের” কল্পনা বলিয়াই মনে হয়। তবে মহম্মদ-ই-বখ্তিয়ারের “নোদিয়া” আক্রমণের সময় লক্ষ্মণসেন ঠিক অশীতিবর্ষীয় না হউন, বার্দ্ধক্যে পদার্পণ করিয়াছিলেন, এ কথা বিশ্বাস করা যাইতে পারে।
তাহার পর জিজ্ঞাস্য—“সহর নোদিয়হ্” কোন্ খানে ছিল? আবুল্ ফজল্ মিন্হাজের “নোদিয়হ্কে” “নদীয়া” বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন, এবং বাঙ্গলায় সংস্কৃত-চর্চ্চার গুরুস্থান নবদ্বীপই যে লখ্মনিয়ার “নদীয়া” তাহার আভাস দিয়াছেন।[২] আবুল্ ফজলের মতই এখন সর্ব্বত্র সমাদর লাভ করিয়াছে। কিন্তু আবুল্ ফজলের সময়েও, সকলে “নোদিয়হ্”কে “নদীয়া” বলিয়া মনে করিত না। “মুন্তখাব্-উৎ-তওয়ারিখ”-গ্রন্থে আবদুল কাদির বেদৌনি মিন্হাজের “নোদিয়হ্”কে “নোদীয়া” বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন।[৩] সংস্কৃত সাহিতো, লক্ষ্মণসেনের দুইটি স্বতন্ত্র রাজধানী, ‘বিজয়পুর’ এবং ‘লক্ষ্মণাবতীর’ উল্লেখ পাওয়া যায়। “পবনদূতে” ধোয়ী কবি সুহ্ম বা রাঢ়দেশের বর্ণনা করিয়া এবং
“भागीरथ्या स्तपनतनया यत्र निर्य्याति देवी” (३३)
সেই মুক্তবেণী (ত্রিবেণীর) উল্লেখ করিয়া,
“स्कन्धावारं विजयपुर मित्युन्नतां राजधानी” (३६)
বর্ণন করিয়াছেন। “প্রবন্ধচিন্তামণি”-গ্রন্থে মেরুতুঙ্গ আচার্য্য লিখিয়াছেন,—“গৌড়দেশে লক্ষ্মণাবতী নগরে—লক্ষ্মণসেন নামক রাজা দীর্ঘকাল রাজত্ব করিয়াছিলেন।” মিন্হাজ লিখিয়াছেন,[৪] “মহম্মদ-ই-বখ্তিয়ার ঐ (রায় লখ্মনিয়ার) মুলুক সকল (মমল্কত) দখল (জব্ত) করিয়া সহর নোদিয়হ্কে “খরাব” করিলেন, এবং যে মৌজা [এখন] লখ্ণাবতী, তাহার উপর রাজধানী (দার-উল্-মুল্ক্) স্থাপন করিলেন।” এখানে দেখা যায়—মহম্মদ-ই-বখ্তিয়ার যেন লখ্ণাবতী নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। “লখ্ণাবতী” লক্ষ্মণাবতীর অপভ্রংশ। মহম্মদ-ই-বখ্তিয়ার যে ইচ্ছাপূর্ব্বক