পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/১২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

উপক্রমণিকা।

প্রজা-বিদ্রোহের নানা স্মৃতিচিহ্ন বর্ত্তমান আছে। তাহার বিস্তৃত বিবরণ “বিবরণমালায়” সন্নিবিষ্ট হইয়াছে।

 এক সময়ে এই প্রজা-বিদ্রোহের কথা বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে সুপরিচিত ছিল। শতবর্ষ পূর্ব্বেও বুকানন্ হামিলটন্ তদ্বিষয়ক জনশ্রুতির সন্ধানলাভ করিয়াছিলেন। সমকালবর্ত্তী বরেন্দ্র-নিবাসী রাজকবি সন্ধ্যাকর নন্দী, এই ঘটনা অবলম্বন করিয়া, সংস্কৃত ভাষায় ‘রামচরিত’ নামক একখানি কাব্য রচনা করিয়াছিলেন। মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিতবর শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এম্-এ, মহাশয়ের প্রশংসনীয় উদ্যমে, তাহা নেপাল হইতে আনীত হইয়া, [এসিয়াটিক্ সোসাইটির যত্নে,] মুদ্রিত হইয়াছে। “গৌড়রাজমালায়” এই বিদ্রোহ-ব্যাপারের আদ্যন্তের বিবরণ উল্লিখিত হইয়াছে। প্রজাপুঞ্জের নির্ব্বাচনক্রমে যে রাজবংশ প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়া, প্রজাশক্তির সাহায্যে সমগ্র উত্তরাপথব্যাপী বিপুল সাম্রাজ্য সংস্থাপিত করিতে সমর্থ হইয়াছিল,—যে রাজবংশের প্রবল পরাক্রমশালী নরপাল দেবপালদেবও, তদীয় মন্ত্রিবরের সম্মুখে, সচকিতভাবে সিংহাসনে উপবেশন করিতেন বলিয়া বরেন্দ্রমণ্ডলের গরুড়স্তম্ভ-লিপিতে উল্লেখ প্রাপ্ত হওয়া যায়,—সেই রাজবংশে জন্মগ্রহণ করিয়া, দ্বিতীয় মহীপালদেব [অনীতি-পরায়ণ হইয়াই] প্রজা-বিদ্রোহ প্রধূমিত করিয়া তুলিয়াছিলেন; এবং তাহাতে স্বয়ং ভস্মীভূত হইয়া, বরেন্দ্রমণ্ডল হইতে পাল-রাজবংশের শাসন-ক্ষমতাও কিয়ৎকালের জন্য ভস্মীভূত করিয়াছিলেন। বরেন্দ্রমণ্ডলে পুনরায় অধিকার লাভ করিতে, রামপালদেবকে বিপুল সমর-সজ্জার আয়োজন করিতে হইয়াছিল; বহু যুদ্ধে তিল তিল করিয়া, বরেন্দ্রভূমিতে বিজয়-লাভ করিতে হইয়াছিল। ইহাতেই তৎকালের লোকনায়কগণের প্রবল শক্তির পরিচয় প্রকাশিত হইয়া রহিয়াছে। বরেন্দ্রমণ্ডলের এই ক্ষণস্থায়ী প্রজা-বিদ্রোহের একটি চিরস্থায়ী কীর্ত্তি-স্তম্ভ এখনও সমুন্নত শিরে সগৌরবে দণ্ডায়মান রহিয়াছে। তাহার কথা বাঙ্গালীর ইতিহাসে স্থানলাভ করিতে পারে নাই;—বরেন্দ্রমণ্ডলের সহিত পরিচয়ের অভাবে, রামচরিত কাব্য মুদ্রিত করিবার সময়ে, সুপণ্ডিত শাস্ত্রী মহাশয়ের নিকটেও তাহা প্রতিভাত হইতে পারে নাই।

 ভীমের নাম এখনও জনশ্রুতি হইতে বিলুপ্ত হয় নাই। তিনি রামপালদেবের আক্রমণ-বেগ প্রতিহত করিবার আশায়, বরেন্দ্রমণ্ডলের প্রান্তভাগের নানা স্থানে, যে সকল মৃৎপ্রাকার রচনা করাইয়াছিলেন, তাহা এখনও “ভীমের ডাইঙ্গ” এবং “ভীমের জাঙ্গাল” নামে কথিত হইতেছে। কিন্তু কল্পনা-লোলুপ জনসাধারণ তাহাকে মধ্যম পাণ্ডবের কীর্ত্তিচিহ্ন বলিয়া বর্ণনা করিতেছে; কোন কোন আধুনিক ইতিহাস-লেখক তাহাকেই বরেন্দ্রভূমির অতি-প্রাচীনত্বের নিদর্শন বলিয়া ইতিহাস রচনা করিতেছেন।

 তৃতীয় ভাগের প্রধান কথা “রামাবতী”র কথা। প্রজা-বিদ্রোহের অবসানে, রামপালদেব এক নূতন নগর নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। তাহাই পাল-রাজবংশের শেষ রাজধানী—“রামাবতী।” সন্ধ্যাকর নন্দী “রামচরিত” কাব্যে এই নগর-নির্ম্মাণেরও বিস্তৃত বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া

॥৹