পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/১৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

উপক্রমণিকা।

 “যে চন্দ্রগুপ্ত স্বভাব-দুর্ব্বোধ আর্য্যচাণক্য-নীতির আশ্রয়গ্রহণ করিয়া, নন্দরাজগণকে পরাভূত ও কুসুমপুর অধিকৃত করিয়াছিলেন, সম্প্রতি নন্দগণ কর্ণাটত্ব-লাভ করিয়া পুনর্জন্ম গ্রহণ করায়, তাঁহাদিগের নিধন সাধনের জন্য, সেই চন্দ্রগুপ্ত আবার শ্রীমন্মহীপালদেবরূপে পুনর্জন্ম গ্রহণ করিয়াছেন।”

 মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এম্-এ, [রামচরিতের ভূমিকায়] ইহাকে মহীপাল কর্ত্তৃক রাজেন্দ্র চোড়ের পরাভব-কাহিনী বলিয়া ব্যাখ্যা করিতে গিয়া, কর্ণাট-রাজ্যকে চোল-রাজ্যের একাংশরূপে গ্রহণ করিয়াছেন। শ্রীযুক্ত রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এম্-এ, তাহাকেই প্রমাণরূপে গ্রহণ করিয়া, সেনরাজ-বংশের পূর্ব্বপুরুষগণকে রাজেন্দ্রচোড়ের সেনানায়ক বলিয়া সিদ্ধান্ত করিতে চাহিয়াছেন। চোলরাজকে কর্ণাটরাজ বলিয়া গ্রহণ করিবার উপযোগী বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখিতে না পাইয়া, গৌড়রাজমালা-লেখক কল্যাণের চালুক্য-রাজ্যকেই কর্ণাট-রাজ্য বলিয়া গ্রহণ করিতে বাধ্য হইয়াছেন। কর্ণাট-শব্দের এরূপ অর্থে চণ্ডকৌশিকের প্রস্তাবনা পাঠ করিলে, বলা যাইতে পারে—অনেকদিন হইতেই প্রাচ্যভারতের গৌড়ীয়সাম্রাজ্য করতলগত করিবার জন্য অনেকের হৃদয়ে উচ্চাভিলাষ প্রবল হইয়া উঠিয়ছিল। অনেকেই গৌড়রাজ্য আক্রমণ করিয়াছিলেন, এবং পরাভূত হইয়া, স্বরাজ্যে প্রস্থান করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। কল্যাণের চালুক্যরাজগণের উচ্চাভিলাষের অভাব ছিল না; তাঁহারাও মহীপালদেবের সহিত একবার শক্তি পরীক্ষা করিয়াছিলেন। তাহার ফলে “কর্ণাটলক্ষ্মী” লুণ্ঠিত হইয়াছিল,—মহীপালের বিজয়োৎসবে নাট্যাভিনয় সম্পাদিত হইয়াছিল। সেনরাজবংশের পূর্ব্বপুরুষগণ এই সকল যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকিয়া, কালক্রমে [দক্ষিণরাঢ়ে কর্ণাটরাজের প্রভুত্ব সংস্থাপিত হইবার পর], বাঙ্গালী প্রজাপুঞ্জের নির্ব্বাচিত পাল-রাজবংশের প্রবল সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল বরেন্দ্রমণ্ডলেও অধিকার বিস্তার করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন।

 কিরূপে “দাক্ষিণাত্য-ক্ষৌণীন্দ্রবংশোদ্ভব” সেনরাজবংশ এদেশে প্রকৃত প্রস্তাবে অধিকার লাভ করিয়ছিল, তাহা এখনও নিঃসংশয়ে স্থিরীকৃত হইবার সময় উপস্থিত হয় নাই। এখনও সেই চেষ্টায়, লেখকবর্গ নানা প্রস্তাব উত্থাপিত করিয়া, ঐতিহাসিক কারণ-পরম্পরার মর্ম্মোদ্ঘাটনের আয়োজন করিতেছেন। এই রূপেই ঐতিহাসিক তথ্য আবিষ্কৃত হইয়া থাকে,—যে সকল প্রস্তাব উত্থাপিত হয়, তাহা অলীক বলিয়া প্রতিপাদিত হইলেও, তাহার প্রয়োজন অস্বীকৃত হয় না। গৌড়রাজমালার লেখকও সেইরূপ প্রয়োজনেই, ঐতিহাসিক তথ্যের সন্ধান-লাভের আশায়, এই সকল প্রস্তাবের অবতারণা করিয়াছেন বলিয়া, ইহাকে সেইরূপ অর্থেই গ্রহণ করিতে হইবে। ইহাতে অনুসন্ধিৎসা প্রবল হইয়া, প্রকৃত তথ্যের আবিষ্কার সাধন করিতে পারিলে, এরূপ প্রস্তাব উত্থাপিত করিবার উদেশ্য সফলতা লাভ করিবে। এ দেশে আধিপত্য লাভ করিবার পূর্ব্বে, সেনরাজগণ যে দেশে থাকুন না কেন, তাঁহারা আমাদিগের দেশের পুরাতন অধিবাসী ছিলেন না,—তাঁহারা আগন্তুক,—তাঁহাদিগের গৌড়বিজয় গৌড়জনের পরাজয়,—তাঁহাদিগের অভ্যুদয়

৸৹