গৌড়রাজমালা।
৩২৬ খৃষ্ট-পূর্ব্বাব্দে মেসিডনের অধীশ্বর দিগ্বিজয়ী সেকেন্দর যখন পঞ্চনদ অধিকার করিয়া বিপাশা-তীরে উপনীত হইয়াছিলেন, তখন তাঁহার শিবিরে “প্রাসিই” এবং “গণ্ডরিডয়” নামক দুইটি রাজ্যের সংবাদ পঁহুছিয়াছিল। সেকেন্দরের ইতিবৃত্ত-লেখকগণ যে ভাবে এই দুইটি রাজ্যের বিবরণ লিখিয়া গিয়াছেন, তাহা হইতে “গণ্ডরিডয়” সম্বন্ধে বিশেষ কোন তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন।[১]
ইহার কিছুকাল পরে, গ্রীকদূত মেগাস্থিনিস্ পাটলিপুত্র-নগরে মৌর্য্য-সম্রাট্ চন্দ্রগুপ্তের সভায় আগমন করিয়াছিলেন। পাটলিপুত্র-নগর যে জনপদের রাজধানী ছিল, মেগাস্থিনিস্ তাহাকে “প্রাসিই” [প্রাচ্য] বলিয়া অভিহিত করিয়া, উহার পূর্ব্বদিকে “গঙ্গরিডি” নামক আর একটি স্বতন্ত্র রাজ্যের উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন। গ্রীক লেখকগণের উল্লিখিত “গণ্ডরিডয়” এবং “গঙ্গরিডি” অভিন্ন বলিয়াই অনুমিত হয়। মেগাস্থিনিসের লিখিত ভারতবর্ষের বিবরণ-সম্বলিত মূল “ইণ্ডিকা” গ্রন্থ এখন আর দেখিতে পাওয়া যায় না। পরবর্ত্তী লেখকগণ তাহার যে সকল অংশ আপন আপন গ্রন্থে উদ্ধৃত করিয়া রাখিয়া গিয়াছেন, তাহাই এখন আমাদের অবলম্বন।[২] ডিওডোরস্ মেগাস্থিনিসের অনুসরণ করিয়া, লিখিয়া গিয়াছেন,—গঙ্গানদী “গঙ্গরিডই দেশেব পূর্ব্বসীমা দিয়া প্রবাহিত হইয়া সাগরে পতিত হইয়াছে। গঙ্গারিডই-নিবাসিগণের অসংখ্য বৃহদাকার রণহস্তী আছে। এই নিমিত্ত তাঁহাদের দেশ কখনও কোন বিদেশীয় রাজা কর্ত্তৃক অধিকৃত হয় নাই। কারণ, অন্যান্য দেশের অধিবাসীরা গঙ্গরিডই-গণের অসংখ্য এবং দুর্জ্জয় রণহস্তি-নিচয়কে ভয় করে।”[৩] বাঙ্গালার যে অংশ ভাগীরথীর পশ্চিমদিকে অবস্থিত, তাহা এখন “রাঢ়” নামে অভিহিত। প্রাচীন-কালে এই প্রদেশ “সুহ্ম” নামে পরিচিত ছিল। “রাঢ়” নামটিও প্রাচীন। “আচারাঙ্গ-সূত্র” নামক প্রাকৃত ভাষায় রচিত প্রাচীন জৈন-গ্রন্থে (১।৮।৩) “লাঢ়” বা রাঢ়দেশ উল্লিখিত আছে। “গঙ্গরিডই”-রাজ্য যে রাঢ়দেশেই সীমাবদ্ধ ছিল, এমন মনে হয় না। কারণ, কেবল রাঢ়দেশের অধিপতির পক্ষে পরাক্রান্ত মগধ-রাজের সহিত প্রতিযোগিতা করিয়া, স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব হইত না। বাঙ্গালার অপর দুইটি বিভাগ,—পুণ্ড্র [বরেন্দ্র] এবং বঙ্গ,—নিশ্চয়ই
- ↑ McCrindle's Invasion of Alexander the Great (Westminister, 1893).
- ↑ McCrindle's Ancient India as Described by Megasthenes and Arrian (Calcutta, 1877).
- ↑ McCrindle's Megasthenes pp 33-34.