পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/৩০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

গৌড়রাজমালা।

পাঁচটি মোহানার উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন। টলেমি যে যুগের বিবরণ প্রদান করিয়া গিয়াছেন, সেই যুগে আর্য্যাবর্ত্তে কুষাণ-সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত ছিল। কুষাণ-প্রভাব যে মগধ পর্য্যন্ত বিস্তৃতিলাভ করিয়াছিল, তাহার কিছু কিছু প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। সম্প্রতি বরেন্দ্রের অন্তর্গত বগুড়া জেলায় কুষাণ-সম্রাট্ বাসুদেবের (?) একটি সুবর্ণ-মুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছে।[] কিন্তু এইরূপ সামান্য প্রমাণ অবলম্বনে কুষাণ-সাম্রাজ্যের সহিত বাঙ্গালার কিরূপ সম্বন্ধ ছিল, তাহা নিরূপণ করা সুকঠিন।

 খৃষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর বাঙ্গালার ইতিহাস একেবারে অন্ধকারাচ্ছন্ন। চতুর্থ শতাব্দীর প্রারম্ভে, [মৌর্য্য-সাম্রাজ্যের অধঃপতনের প্রায় পাঁচশত বৎসর পরে] মগধে আর একটি মহাসাম্রাজ্য-প্রতিষ্ঠার আয়োজন হইয়াছিল। যিনি এই সাম্রাজ্যের ভিত্তি-স্থাপন করিয়াছিলেন, তাঁহার নামও চন্দ্রগুপ্ত। ৩২০ খৃষ্টাব্দের ২৬শে ফেব্রুয়ারী [এই চন্দ্রগুপ্তের অভিষেক-কাল] হইতে “গুপ্তাব্দ” নামক একটি অভিনব অব্দ-গণনার আরম্ভ হইয়াছিল বলিয়া সুধীগণ স্থির করিয়াছেন। চন্দ্রগুপ্তের পুত্র, [লিচ্ছবি-রাজকুলের দৌহিত্র] সমুদ্রগুপ্ত স্বীয় ভূজবলে এই অভিনব সাম্রাজ্য গঠিত করিয়াছিলেন। প্রয়াগের অশোকস্তম্ভ-গাত্রে উৎকীর্ণ কবি-হরিষেণ-বিরচিত প্রশস্তিতে সমুদ্রগুপ্তের দিগ্বিজয়-কাহিনী বর্ণিত রহিয়াছে। এই প্রশস্তিতে সমুদ্রগুপ্ত [“সমতট-ডবাক্-কামরূপ-নেপাল-কর্ত্তৃপুরাদি-প্রত্যন্তনৃপতিভিঃ”] প্রত্যন্ত প্রদেশের নৃপতিগণকর্ত্তৃক [“সর্ব্বকর-দানাজ্ঞা-করণ-প্রণামাগমন-পরিতোষিত-প্রচণ্ডশাসনস্য”] সর্ব্বকরদান-আজ্ঞাকরণ, প্রণাম এবং আগমনের দ্বারা পরিতুষ্ট প্রচণ্ড শাসনকারী বলিয়া বর্ণিত হইয়াছেন।[] বাঙ্গলার কোন্ অংশ যে “ডবাক্” নামে উল্লিখিত হইয়াছে, তাহা স্থির করা কঠিন। কারণ, এ পর্য্যন্ত আর কোথাও “ডবাক্” নামটি দেখিতে পাওয়া যায় নাই। সমতট [বঙ্গ] এবং “ডবাক্” ব্যতীত, বাঙ্গলার অপরাপর অংশ,—পুণ্ড্র, [বরেন্দ্র] এবং রাঢ়,—সম্ভবত খাস গুপ্ত-সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূত হইয়াছিল।

 আনুমানিক ৩৮০ খৃষ্টাব্দে [সম্রাট্ সমুদ্রগুপ্তের পরলোকান্তে] তদীয় পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত সাম্রাজ্যলাভ করিয়াছিলেন; এবং ৪১৩ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত সিংহাসনে অধিরূঢ় ছিলেন। দিল্লীর নিকটবর্ত্তী [মিহরৌলী নামক স্থানে অবস্থিত] একটি লৌহ-স্তম্ভে “চন্দ্র” নামক এক জন পরাক্রান্ত নৃপতির দিগ্বিজয়-কাহিনী উৎকীর্ণ রহিয়াছে। এই লিপিতে উক্ত হইয়াছে,—এই নৃপতি “বঙ্গদেশে সমরে দলবদ্ধ বহুসংখ্যক শক্রকে পরাভূত করিয়াছিলেন।”\[] কেহ কেহ এই “চন্দ্র”কে দ্বিতীয়

  1. “বরেন্দ্র-অনুসন্ধান-সমিতির” অন্যতম সভ্য, বন্ধুবর শ্রীযুক্ত রাজেন্দ্রলাল আচার্য্য, এই মুদ্রাটি জনৈক নিরক্ষর পল্লীবাসীর হস্ত হইতে উদ্ধার করিয়া, প্রত্নতত্ত্বানুরাগী মাত্রেরই কৃতজ্ঞতা-ভাজন হইয়াছেন।
  2. Fleet’s Gupta Inscriptions p. 6.
  3. Fleet’s Gupta Inscriptions, p. 141.

    “यस्योहर्त्तयतः प्रतीपमुरसा शत्रून् समेत्यागतान्
    वङ्गेष्वाहववर्त्तिनोभिलिखिता खड़्गेन कीर्त्तिर्भुजे।”

8