চন্দ্রগুপ্ত বলিয়া অনুমান করিয়াছেন। সমুদ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর, সম্ভবতঃ বঙ্গের বা সমতটের সামন্তগণ স্বাতন্ত্র্য অবলম্বন করিয়াছিলেন; এবং সেই বিদ্রোহ-দমনের জন্য সম্রাট্ বঙ্গদেশ আক্রমণ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত যখন আর্য্যাবর্ত্তের সম্রাট্, তখন পরিব্রাজক ফা হিয়ান্ আর্য্যাবর্ত্ত-ভ্রমণে ব্যাপৃত ছিলেন; এবং ভ্রমণের শেষ দুই বৎসর (৪১১-৪১২ খৃষ্টাব্দ) তাম্রলিপ্তি-বন্দরে বাস করিয়া, বৌদ্ধ-গ্রন্থের প্রতিলিপি প্রস্তুত করণে এবং দেব-মূর্ত্তির চিত্র সঙ্কলনে নিরত ছিলেন।
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর, প্রথম কুমারগুপ্ত সাম্রাজ্যাভিষিক্ত হইয়াছিলেন। ১১৩ গুপ্তসম্বতে [৪৩২ খৃষ্টাব্দে] উৎকীর্ণ কুমারগুপ্তের সময়ের এক খানি তাম্রশাসন রাজসাহী জেলার অন্তর্গত ধানাইদহ গ্রামে আবিষ্কৃত হইয়াছে।[১] কুমারগুপ্ত দীর্ঘকাল [৪১৩—৪৫৫ খৃষ্টাব্দ] সাম্রাজ্য পালন করিয়া, পরলোক গমন করিলে, তদীয় পুত্র স্কন্দগুপ্ত পিতৃ-সিংহাসনে অধিরোহণ করিয়াছিলেন। ফরিদপুর জেলায় স্কন্দগুপ্তের মুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছে; এবং ঢাকা, ফরিদপুর এবং যশোহর জেলার কোন কোন স্থানে গুপ্ত-সম্রাটদিগের মুদ্রার ঢঙ্গের মুদ্রা দেখিতে পাওয়া গিয়াছে। স্কন্দগুপ্তের সময় হইতে মধ্য এসিয়াবাসী হূণগণ আসিয়া উত্তরাপথ [আর্য্যাবর্ত্ত] আক্রমণ করিতে আরম্ভ করিয়াছিল। সম্রাট্ স্কন্দগুপ্ত প্রথমবারের আক্রমণকারিগণকে পরাভূত করিয়া, সাম্রাজ্য-রক্ষায় সমর্থ হইয়াছিলেন। স্কন্দগুপ্তের উত্তরাধিকারিগণ তেমন যোগ্য লোক ছিলেন না। খৃষ্টীয় পঞ্চম শতাদের শেষভাগে, হূণ-নায়ক তোরমাণশাহ আসিয়া, সাম্রাজ্যের পশ্চিমার্দ্ধ অধিকার করিয়া লইয়াছিলেন।
ষষ্ঠ শতাদের প্রারস্তে যশোধর্ম্ম-বিষ্ণুবর্দ্ধন তোরমাণের পুত্র হূণাধিপ মিহিরকুলকে পরাজিত করিয়া, পুনরায় সাম্রাজ্যের ঐক্য-স্থাপনে সমর্থ হইয়াছিলেন। মালবদেশের অন্তর্গত দসোর বা মন্দসোর-নগরের নিকটে প্রাপ্ত [যশোধর্ম্ম-কর্ত্তৃক স্থাপিত] দুইটি প্রস্তর-স্তম্ভে যে প্রশস্তি উৎকীর্ণ রহিয়াছে, তাহাতে উক্ত হইয়াছে—“গুপ্তনাথগণ” এবং “হূণাধিপগণ” যে সকল দেশ অধিকারে অসমর্থ হইয়াছিলেন, তিনি সেই সকল দেশও উপভোগ করিয়াছিলেন; এবং পূর্ব্বদিকে
“आलौहित्योपकण्ठात्तालवनगहनोपत्यकादामहेन्द्रात्”
“লৌহিত্য [ব্রহ্মপুত্র] নদের উপকণ্ঠ হইতে আরম্ভ করিয়া, গহন-তালবনাচ্ছাদিত মহেন্দ্র-গিরির উপত্যকা [কলিঙ্গ] পর্য্যন্ত” বিস্তৃত ভূভাগের সামন্তগণ তাঁহার চরণে প্রণত হইয়াছিল (৪–৬ শ্লোক)।[২] মন্দসোর হইতে সংগৃহীত [যশোধর্ম্মের শাসন-সময়ের] “মালবগণস্থিতি” হইতে গণিত অব্দের ৫৮৯ সালের, আর একখানি শিলা-লিপিতে উক্ত হইয়াছে[৩];—
৫