পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/৪০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

গৌড়রাজমালা।

শেষার্দ্ধের বাঙ্গালার ইতিহাস ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন। মগধের আদিত্যসেন (৬৭১ খৃষ্টাব্দে) “মহারাজাধিরাজ” উপাধি গ্রহণ করিয়া, অশ্বমেধের অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন। বাঙ্গালায় তাঁহার আধিপত্য বিস্তার লাভ করিয়াছিল কিনা, বলা সুকঠিন। পরিব্রাজক ইৎসিং লিখিয়া গিয়াছেন,—সপ্তম শতাব্দের শেষার্দ্ধে, সেঙ্গচি নামক একজন পরিব্রাজক চীনদেশ হইতে জলপথে সমতটে বা বঙ্গে আগমন করিয়াছিলেন। সেঙ্গচি রাজভট নামক একজন নিষ্ঠাবান্ বৌদ্ধ-নৃপতিকে সমতটের সিংহাসনে আসীন দেখিয়াছিলেন।[]

 খৃষ্টীয় অষ্টম শতাদের অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্গালায় বড়ই দুর্দ্দিনের সূত্রপাত হইয়াছিল। উত্তরাপথের ইতিহাসে এই যুগ ঘোর পরিবর্ত্তনের যুগ। হৰ্ষবর্দ্ধনের মৃত্যুর পর, উত্তরাপথে সার্ব্বভৌমতন্ত্র-শাসন বিলুপ্ত হইয়াছিল; কিন্তু তৎপরিবর্ত্তে, বিভিন্ন প্রদেশে, স্থিতিশীল স্বতন্ত্র রাজতন্ত্র-শাসন প্রতিষ্ঠিত হইতে অনেক বিলম্ব ছিল। অবিরত রাজবিপ্লব এই যুগের প্রধান লক্ষণ। বাঙ্গালার ভাগ্যে এই বিপ্লব-জনিত ক্লেশের ভার অপেক্ষাকৃত গুরুতর হইয়াছিল। বিন্ধ্য-প্রদেশের অধীশ্বর দ্বিতীয় জয়বর্দ্ধনের [রঘোলিতে প্রাপ্ত] তাম্রশাসন হইতে জানা যায়,—“শৈলবংশতিলক” শ্রীবর্দ্ধন নামক নরপতির সৌবর্দ্ধন নামক পুত্র ছিল। এই সৌবর্দ্ধনের আবার তিন পুত্র হইয়াছিল।

“तेषा मूर्ज्जित-वैरि-विदारण-पटुं पौण्ड्राधिपं क्ष्मा-पतिं।
इ त्वै को विषयं तमेव सकलं जग्राह शौर्य्यान्वितः॥”

 “ইঁহাদিগের মধ্যে শৌর্য্যান্বিত একজন পরাক্রান্ত-শত্রু-বিদারণ-পটু পৌণ্ড্রাধিপকে নিহত করিয়া সমস্ত (পৌণ্ড্র) দেশ অধিকার করিয়াছিলেন।”[]

 এই পৌণ্ড্র-বিজেতার কনিষ্ঠ সহোদরের প্রপৌত্র দ্বিতীয় জয়বর্দ্ধন রখোলিতে প্রাপ্ত শাসনের সম্পাদন-কর্ত্তা। এই তাম্রশাসনের প্রকাশক শ্রীযুক্ত হীরালাল, অক্ষরের আকৃতির হিসাবে ইহাকে খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর শেষভাগে স্থাপন করিতে চাহেন। সুতরাং দ্বিতীয় জয়বর্দ্ধনের অনুল্লিখিত-নামা প্রপিতামহের অনুল্লিখিত-নামা পৌণ্ড্রাধিপহন্তা অগ্রজকে অষ্টম শতাব্দের প্রারম্ভে স্থাপন করা যাইতে পারে। এই পৌণ্ড্র-জিৎ কোন্ দেশ হইতে আসিয়া, পৌণ্ড্রদেশ আক্রমণ করিয়াছিলেন, তাঁহার বংশের নাম হইতে তাহার কথঞ্চিৎ আভাস পাওয়া যায়। গৌড়াধিপ শশাঙ্কের কলিঙ্গের মহাসামন্ত মাধবরাজ “শৈলোদ্ভব”-বংশীয় ছিলেন, তাহা পূর্ব্বেই উল্লিখিত হইয়াছে। অন্যান্য তাম্রশাসন হইতে জানা যায়,—সপ্তম শতাব্দে উড়িষ্যা ও কলিঙ্গ “শৈলোদ্ভব”-বংশীয় রাজগণের করতল-গত ছিল। অজ্ঞাতনামা “শৈলবংশীয়” পৌণ্ড্রজিৎ “শৌলোদ্ভব-বংশের” শাখান্তর হইতে সমুদ্ভূত বলিয়া অনুমান হয়। এই অভিনব পৌণ্ড্রাধিপের নামের মত, ইঁহার পরিণাম সম্বন্ধেও, আমরা কিছুই জানি না।

  1. Beal’s Life of Hiuen Tsiang (London 1888,) P. XXX; Watters II. p. 188.
  2. Epigraphia Indica, Vol. IX. P. 44.

১৪