পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/৪১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
গৌড়াধিপ শশাঙ্ক।

 পৌণ্ড্রদেশ যখন “শৈলবংশীয়” আক্রমণকারীর পদানত, তখন যশোবর্ম্মা নামক একজন উচ্চাভিলাষী নরপাল কান্যকুব্জের সিংহাসন লাভ করিয়া, হৰ্ষবর্দ্ধনের রাজধানীর পূর্ব্ব-গৌরব পুনরুজ্জীবিত করিতে যত্নবান্ হইয়াছিলেন। যশোবর্ম্মার দিগ্বিজয়-কাহিনী তদীয় সভাকবি বাক্‌পতিরাজ কর্ত্তৃক “গউড়বহো” নামক প্রাকৃত ভাষায় রচিত কাব্যে বর্ণিত হইয়াছে।[] চীনদেশের ইতিহাসে উল্লিখিত হইয়াছে, ৭৩১ খৃষ্টাব্দে যশোবর্ম্মা চীন সম্রাটের নিকট দুত প্রেরণ করিয়াছিলেন। ইহার পূর্ব্বেই সম্ভবতঃ যশোবর্ম্মার “গউড়বহো"-বর্ণিত দিগ্বিজয় সম্পন্ন হইয়াছিল।

 বাক্‌পতিরাজের কাব্যের “গউড়” বা গৌড়পতি এবং “মগহনাহ” বা মগধ-নাথ অভিন্ন ব্যক্তি; অর্থাৎ তৎকালে মগধেশ্বর শশাঙ্ক-প্রবর্ত্তিত উত্তরাপথের পূর্ব্বাংশের অধিপতি “গৌড়াধিপ”-উপাধিতে ভূষিত ছিলেন। বস্তুতঃ সপ্তম শতাব্দের সূচনা হইতে [দ্বাদশ শতাব্দের অবসানে] তুরুষ্ক-বিজয় পর্য্যন্ত, গৌড়মণ্ডলের আভ্যন্তরীণ অবস্থা যখন যেরূপই হউক, “গৌড়েশ্বর” বা “গৌড়াধিপ”-উপাধিধারী নরপতির অভাব কখনও উপস্থিত হয় নাই। যশোবর্ম্মার প্রতিদ্বন্দ্বী “গৌড়পতি” সম্ভবতঃ আদিত্যসেনের প্রপৌত্র মহারাজাধিরাজ দ্বিতীয় জীবিত গুপ্ত। বাক্‌পতি লিখিয়াছেন,—কান্যকুব্জ হইতে দিগ্বিজয়ার্থ বহির্গত হইয়া, যশোবর্ম্মা যখন বিন্ধ্য-পর্ব্বত অতিক্রম করিতেছিলেন, তখন “তাঁহার ভয়ে, মদস্রাবী গজের ললাট-নিঃসৃত জলের দ্বারা সম্মুখ-দেশ মায়া-নির্ম্মিত নৈশ-অন্ধকারের মত অন্ধকার করিয়া, মগধ-নাথ পলায়ন করিলেন (৩৬৫ শ্লোক)॥” কিন্তু মগধ-নাথের সামন্তগণ পলায়ন করিতে সম্মত হইলেন না; ফিরিয়া যুদ্ধার্থ প্রস্তুত হইলেন।

 “পলায়নপর মগধ-নাথের (সামন্ত)-নৃপতিগণ প্রত্যাবর্ত্তন করিয়া, উল্কা-নির্গত অগ্নিকণা-সমূহের ন্যায় শোভা পাইতে লাগিলেন (৪১৪ শ্লোক)॥

 “সেই যুদ্ধের আরম্ভে (যশোবর্ম্মার) শত্রু-সৈন্যের শোণিতের দ্বারা তাম্রবর্ণে রঞ্জিত মহীতল মেঘ হইতে পতিত বিদ্যুল্লতার ন্যায় শোভা পাইতে লাগিল (৪১৫)॥

 “রাজা (যশোবর্ম্মা) পলায়ন-পর মগধ-নাথকে নিহত করিয়া, দারুচিনির সুগন্ধে পরিপূর্ণ সমুদ্রতীর-বনে গমন করিয়াছিলেন (৪১৭)॥”

 মগধ-নাথ যেরূপ সমরানুরাগী সামন্তগণে পরিবেষ্টিত হইয়া, যশোবর্ম্মার সম্মুখীন হইতে সমর্থ হইয়াছিলেন, তাহাতে বোধ হয়,—তাঁহার “গৌড়াধিপ” উপাধি নিরর্থক ছিল না। কিন্তু বঙ্গ-পতি এই সামন্ত-চক্রের বহির্ভূত ছিলেন। বাক্‌পতি “মগধ-নাথের” ন্যায় বঙ্গ-পতির নামের উল্লেখ করেন নাই। তিনি এই মাত্র লিখিয়াছেন, যশোবর্ম্মা মগধ-নাথকে নিহত করিয়া, সমুদ্রতীরস্থিত বঙ্গ-রাজ্যে উপনীত হইলে, অসংখ্য হস্তীর অধিনায়ক বঙ্গেশ্বর যুদ্ধে পরাজিত হইয়া, বিজেতার পদানত হইয়াছিলেন।

 যশোবর্ম্মা বাহুবলে উত্তরাপথ-সাম্রাজ্য পুনঃ প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হইলেও, তাঁহার ভাগ্যে অধিক দিন

  1. “गउड़ वहो”—এস্, পি, পণ্ডিত সম্পাদিত। সটীক। Bombay Sanskrit Series, No. 34.

১৫