গৌড়রাজমালা।
বলিয়া বর্ণিত হইয়াছেন। ইহা হইতে অনুমান হয়,—বপ্যট সমৃদ্ধ এবং সমর-কুশল ছিলেন। গোপাল রাজপদে নির্ব্বাচিত হইয়াই, সম্ভবত গৌড়মণ্ডল একচ্ছত্র করিতে যত্নবান হইয়াছিলেন; এবং গুর্জ্জরপতি বৎসরাজ [৭৮৪ হইতে ৭৯৪ খৃষ্টাব্দের মধ্যে কোন এক সময়ে] যখন রাষ্ট্ৰকূট-রাজ ধ্রুব কর্ত্তৃক রাজপুতনার মরুভূমিতে বিতাড়িত হইয়াছিলেন, তখন স্বীয় উদ্দেশ্য সাধনের অবসর লাভ করিয়াছিলেন। দেবপালের [মুঙ্গেরে প্রাপ্ত] তাম্রশাসনে উক্ত হইয়াছে,—গোপাল সমুদ্র পর্য্যন্ত ধরণীমণ্ডল অধিকার করিয়াছিলেন; এবং তারানাথ লিখিয়াছেন,—গোপাল মগধ অধিকার করিয়াছিলেন। হয়ত মিথিলা বা তীরভুক্তি [ত্রিহুত]ও তাঁহার পদানত হইয়াছিল। তীরভুক্তি যে পাল-নরপালগণের অধিকারভুক্ত ছিল, নারায়ণপালের [ভাগলপুরে প্রাপ্ত] তাম্রশাসন তাহার সাক্ষ্যদান করিতেছে; অথচ কখন্ যে তীরভুক্তি অধিকৃত হইয়াছিল, তাহা কোনও তাম্রশাসনে উল্লিখিত হয় নাই। সুতরাং গোপালই তীরভুক্তি অধিকার করিয়াছিলেন, এরূপ অনুমান করা যাইতে পারে।
গোপাল গৌড়মণ্ডল একছত্র করিয়া, কালগ্রাসে পতিত হইলে, তদীয় উত্তরাধিকারী ধর্ম্মপাল পিতৃ-সিংহাসনে আরোহণ করিয়াই, গৌড়াধিপ শশাঙ্কের ন্যায় উত্তরাপথের সার্ব্বভৌমের পদলাভের জন্য যত্নবান হইয়াছিলেন। শশাঙ্ক যেখানে ব্যর্থ-মনোরথ হইয়াছিলেন, ধর্ম্মপাল সেখানে কৃতকার্য্য হইলেন। ধর্ম্মপালের [খালিমপুরে প্রাপ্ত] তাম্রশাসনে উক্ত হইয়াছে,—“তিনি [ধর্ম্মপাল] মনোহর ভ্রূভঙ্গি-বিকাশে (ইঙ্গিতমাত্রে) ভোজ, মৎস্য, মদ্র, কুরু, যদু, যবন, অবন্তি, গন্ধার, কীর প্রভৃতি বিভিন্ন জনপদের নরপালগণকে প্রণতিপরায়ণ চঞ্চলাবনত মস্তকে সাধু সাধু বলিয়া কীর্ত্তন করাইতে করাইতে, হৃষ্টচিত্ত পঞ্চালবৃদ্ধ কর্ত্তৃক মস্তকোপরি আত্মাভিষেকের স্বর্ণকলস উদ্ধৃত করাইয়া, কান্যকুব্জরাজকে রাজশ্রী প্রদান করিয়াছিলেন।” এই ঘটনাটি নারায়ণপালের [ভাগলপুরে প্রাপ্ত] তাম্রশাসনে আরও সহজ ভাষায় বর্ণিত হইয়াছে। যথা—“ইন্দ্ররাজ প্রভৃতি শত্রগণকে পরাজিত করিয়া, পরাক্রান্ত [ধর্ম্মপাল] মহোদয়ের [কান্যকুব্জের] রাজশ্রী উপার্জ্জন করিয়াছিলেন; এবং পুনরায় উহা প্রণত এবং প্রার্থী চক্রায়ুধকে প্রদান করিয়াছিলেন।” পণ্ডিতগণ অনুমান করেন,—এই ইন্দ্ররাজই জৈন-হরিবংশে উল্লিখিত উত্তর-দিক্পাল ইন্দ্রায়ুধ। গুর্জ্জর এবং মালবের বহির্ভাগে অবস্থিত, গান্ধার [পেশোয়ার প্রদেশ] হইতে মিথিলার সীমান্ত পর্য্যন্ত বিস্তৃত সমস্ত উত্তরাপথ ইন্দ্রায়ুধের করতলগত ছিল। ধর্ম্মপাল ইন্দ্রায়ুধ এবং তাঁহার সামন্তগণকে পরাজিত করিয়া, উত্তরাপথের সার্ব্বভৌমের সমুন্নত পদ লাভ করিয়াছিলেন। এত বৃহৎ সাম্রাজ্য স্বয়ং শাসন করিতে সমর্থ হইবেন না মনে করিয়া, তিনি আয়ুধ-রাজবংশীয় আর এক জনকে [চক্রায়ুধকে] স্বকীয় মহাসামন্তরূপে কান্যকুব্জে প্রতিষ্ঠাপিত করিয়াছিলেন। তারানাথ পালরাজগণের যে বংশতালিকা প্রদান করিয়া গিয়াছেন, তাহা বহু প্রমাদপূর্ণ। তারানাথ ধর্ম্মপালকে গোপালের প্রপৌত্র, দেবপালের পৌত্র, এবং রসপালের পুত্র বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন; কিন্তু ধর্ম্মপালের সাম্রাজ্যের যে বিবরণ প্রদান করিয়া গিয়াছেন, তাহা অনেকাংশে তাম্রশাসনের প্রমাণের অনুযায়ী। তারানাথ
২২