“যাঁহার ভুজ ভোজকে, বল্লভরাজকে, চিত্রকূটপতি শ্রীহৰ্ষকে এবং রাজা শঙ্করগণকে অভয়দান করিয়াছিল।”
বিল্হরিতে প্রাপ্ত শিলালিপিতে কোক্কল্ল-সম্বন্ধে উক্ত হইয়াছে—[১]
“जित्वा कृत्स्नं येन पृथ्वी मपूर्व्वङ्कीर्त्तिस्तम्भ-द्वन्द्व मारोप्यते स्म।
कौम्भोद्भव्यान्दिश्यसौ कृष्णराजः कौवेर्याञ्च श्रीनिधि भोर्ज्जदेवः॥” (१७ श्लोकः)
“যিনি সমস্ত পৃথিবী জয় করিয়া, দুইটি অপূর্ব্ব কীর্ত্তিস্তম্ভ স্থাপন করিয়াছিলেন,—দক্ষিণদিকে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণরাজ এবং উত্তরদিকে শ্রীনিধি ভোজদেব।”
দ্বিতীয় কৃষ্ণরাজ কৃষ্ণবল্লভ নামেও পরিচিত ছিলেন। সুতরাং কোক্কল্লের নিকট অভয়প্রাপ্ত বল্লভরাজ, এবং তাঁহার দ্বারা দক্ষিণদিকে প্রতিষ্ঠিত কৃষ্ণরাজ একই ব্যক্তি, কোক্কল্লের জামাতা দ্বিতীয় কৃষ্ণরাজ। ভোজদেব অবশ্যই গুর্জ্জর-প্রতীহার মিহির-ভোজ; চিত্রকূটপতি শ্রীহৰ্ষ জেজাভুক্তির চান্দেল্ল-বংশীয় রাজা শ্রীহৰ্ষ।[২] এখন জিজ্ঞাস্য, কোন্ শত্রুর হস্ত হইতে কোক্কল্ল এই সকল প্রবল পরাক্রান্ত নরপালগণকে রক্ষা করিয়াছিলেন? তৎকালে গৌড়েশ্বর দেবপাল ভিন্ন রাষ্ট্রকূট-রাজ বা কান্যকুব্জ-রাজের সহিত প্রতিযোগিতা করিতে সমর্থ আর কোন নরপালের পরিচয় এ পর্য্যন্ত পাওয়া যায় নাই। সুতরাং আমরা সিদ্ধান্ত করিতে বাধ্য, প্রতীহার-রাজ মিহির-ভোজ, কলচুরি-রাজ কোক্কল্ল, রাষ্ট্রকূট-রাজ দ্বিতীয় কৃষ্ণ, এবং চান্দেল্ল-রাজ শ্রীহৰ্ষ, আত্মরক্ষার জন্য সম্মিলিত হইয়া, বিজিগীষু দেবপালের সহিত সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। এইরূপ প্রবল বাধা না পাইলে, হয়ত দেবপাল উত্তরাপথের সার্ব্বভৌমের পদ-লাভে সমর্থ হইতেন।
দেবপাল যে কলচুরি বা চেদিরাজ্য অতিক্রম করিয়া, মধ্যভারতের পশ্চিমাংশ আক্রমণে কৃতকার্য্য হইয়াছিলেন, “হূণ-গর্ব্ব-হরণ”-প্রসঙ্গই তাহার প্রমাণ। ষষ্ঠ শতাদের প্রথমার্দ্ধে যশোধর্ম্ম কর্ত্তৃক পরাজিত হূণ-রাজ মিহিরকুলের মৃত্যুর পর, হূণ-রাজ্যের অস্তিত্বের কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না; কিন্তু উত্তরাপথের স্থানে স্থানে, বিশেষত মধ্যভারতে, দীর্ঘকাল পর্য্যন্ত হূণ-প্রভাব অক্ষুণ্ণ ছিল, এরূপ যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। “হর্ষচরিতে” থানেশ্বরের অধিপতি প্রভাকরবর্দ্ধন “হূণহরিণের-সিংহ” বলিয়া বর্ণিত হইয়াছেন; এবং [৬০৫ খৃষ্টাব্দে] তাঁহার মৃত্যুর পূর্ব্বে, তিনি জ্যেষ্ঠপুত্র রাজ্যবর্দ্ধনকে “হূণ-হত্যার জন্য উত্তরাপথে প্রেরণ করিয়াছিলেন,” এরূপ উল্লেখ আছে। মিহির-ভোজের পুত্র কান্যকুব্জরাজ মহেন্দ্রপালের সৌরাষ্ট্রের মহাসামন্ত দ্বিতীয় অবনিবর্ম্মা-যোগের, উনায় প্রাপ্ত ৯৫৬ বিক্রম সম্বতের (৮৯৯ খৃষ্টাব্দের) তাম্রশাসনে, তাঁহার পিতা বলবর্ম্মা সম্বন্ধে উক্ত হইয়াছে,—তিনি জজ্জপাদি নৃপতিগণকে নিহত করিয়া, “ভুবন হূণবংশহীন করিয়াছিলেন।”[৩] দেবপালের পরবর্ত্তী-
৩১