গৌড়রাজমালা।
যুগে, খৃষ্টীয় দশম শতাব্দে, হূণগণ মালবে উদীয়মান পরমার-রাজবংশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। পদ্মগুপ্তের “নবসাহসাঙ্ক চরিত”[১] এবং পরমার-রাজগণের প্রশস্তি[২] হইতে জানা যায়,—পরমাররাজ দ্বিতীয় শিয়ক, তদীয় পুত্র উৎপল-মুঞ্জরাজ (৯৭৪–৯৯৪ খৃঃ অঃ) এবং সিন্ধুরাজ যথাক্রমে হূণরাজগণের সহিত যুদ্ধে ব্যাপৃত ছিলেন। দেবপাল সম্ভবত মালবের হূণগণের গর্ব্ব খর্ব্ব করিয়াছিলেন।
গৌড়েশ্বর দেবপালের প্রতীহার, চান্দের, কলচুরি, এবং রাষ্ট্রকূট-রাজের সহিত বিরোধ, গৌড়গণের সকলোত্তরা-পথের একাধিপতা লাভের তৃতীয় চেষ্টা। শশাঙ্ক এবং ধর্ম্মপাল এ ক্ষেত্রে যতদূর কৃতকার্য্য হইয়াছিলেন, ঘটনাক্রমে দেবপাল ততদুর কৃতকার্য্য হইতে (কান্যকুব্জ পর্য্যন্ত পঁহুছিতে) না পারিলেও, পরাক্রমে তিনি শশাঙ্ক এবং ধর্ম্মপালের তুল্য আসন, এবং সমসাময়িক নরপালগণের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ আসন, পাইবার যোগ্য। দেবপালের [মুঙ্গেরে প্রাপ্ত] তাম্রশাসনে প্রশস্তিকার যে লিখিযছেন,—“একদিকে হিমাচল, অপরদিকে শ্রীরামচন্দ্রের কীর্ত্তিচিহ্ন সেতুবন্ধ, একদিকে বরুণালয় (সমুদ্র), অপরদিকে লক্ষ্মীর জন্মনিকেতন (অপর সমুদ্র) এই চতুঃসীমাবচ্ছিন্ন ভূমণ্ডল সেই রাজা নিঃসপত্নভাবে উপভোগ করিতেছেন,”—একথা কবিকল্পিত হইলেও, ইহার অভ্যন্তরে গৌড়াধিপ এবং গৌড়জনের অন্তর্নিহিত উচ্চাভিলাষের ছায়া প্রচ্ছন্ন রহিয়াছে; এবং দেবপাল এই অভিলাষপূরণে সমর্থ না হইলেও, উহার উদ্যোগ করিতে গিয়া, তিনি যে তৎকালীন ভারতীয় নরপতিসমাজে বাহুবলে স্বীয় শ্রেষ্ঠতা প্রতিপাদনে সমর্থ হইয়াছিলেন, তাহ স্বীকার না করিয়া পারা যায় না।
দশম শতাব্দের প্রারম্ভে, দেবপালের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে, গৌড়রাজ্যের উন্নতির যুগের অবসান হইয়াছিল। প্রায় একই সময়ে, [৯০৭ হইতে ৯১৪ খৃষ্টাব্দের মধ্যে,] মিহির-ভোজের পুত্র এবং উত্তরাধিকারী মহেন্দ্রপালের মৃত্যুতে, প্রতিযোগী কান্যকুব্জ-রাজ্যেরও অধঃপতনের সূচনা হইয়াছিল। এই দুইটি পরাক্রান্ত রাজ্যের অধঃপতনের সূচনা হইতেই, উত্তরাপথের অধঃপতনের সূত্রপাত। মুইজুদ্দীন মহম্মদ ঘোরী কর্ত্তৃক উত্তরাপথ বিজিত হইবার এখনও প্রায় তিনশত বৎসর বাকী ছিল। কিন্তু উত্তরাপথের এই তিনশত বৎসরের ইতিহাস তুরূষ্ক-বিজেতার সাদর অভ্যর্থনার উদ্যোগের সুদীর্ঘ কাহিনীমাত্র।
দেবপালের মৃত্যুর পর, বিগ্রহপাল গৌড়-রাজ্যের সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন। হরগৌরীর [বাদল] স্তম্ভে বিগ্রহপাল শূরপাল নামে উল্লিখিত হইয়াছেন। নারায়ণপালের [ভাগলপুরে প্রাপ্ত] তাম্রশাসনে বিগ্রহপাল “অজাতশত্রু”, “শক্রগণের গুরুতর বিষাদ”, এবং “সুহৃজ্জনের আজীবনস্থায়ী সম্পদ্”-বিধানকারী বলিয়া বর্ণিত হইয়াছেন। ভাগলপুরের
৩২