পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/৬০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

গৌড়রাজমালা।

জগত্তুঙ্গ। রাজ্যপাল এবং ভাগ্যদেবীর পুত্র, দ্বিতীয় গোপাল, পিতার পরলোক গমনের পর সিংহাসনে আরোহণ করিয়া, “চিরতরে” “অবনীর একমাত্র ভর্ত্তা” ছিলেন বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছেন।

 বিগ্রহপাল এবং তাঁহার পুত্র, পৌত্র, এবং প্রপৌত্র যখন যথাক্রমে গৌড়মণ্ডলে শাসনদণ্ড পরিচালন করিতেছিলেন, তখন জেজাভুক্তির (বর্তমান বুন্দেলখণ্ডের) চন্দেল্ল-রাজগণ পরাক্রমে গৌড়েশ্বর এবং কান্যকুব্জেশ্বর, উত্তরাপথের এই উভয় দিক্‌পালকে, অতিক্রম করতে সমর্থ হইয়াছিলেন। প্রতীহার-রাজ মহেন্দ্রপালের পুত্র মহীপাল বা ক্ষিতিপালকে (?) এবং ক্ষিতিপালের উত্তরাধিকারী দেবপালকে, আত্মরক্ষার জন্য, চন্দেল্ল-রাজগণের সহিত মৈত্রী স্থাপন করিতে হইয়াছিল। চন্দেল্ল-রাজ যশোবর্ম্মার ১০১১ সম্বতে (৯৫৪ খৃষ্টাব্দে) উৎকীর্ণ খাজুরাহের একখানি শিলালিপি হইতে জানা যায়,—যশোবর্ম্মার পিতা হর্ষদেবের সহায়তায়, সিংহাসনচ্যুত ক্ষিতিপাল, কান্যকুব্জ-সিংহাসন-পুনরুদ্ধারে সমর্থ হইয়াছিলেন। এই ক্ষিতিপাল বা মহীপাল রাষ্ট্ৰকূট-রাজ তৃতীয় ইন্দ্র কর্ত্তৃক কান্যকুব্জ হইতে তাড়িত হইয়াছিলেন।[১] মহীপালের উত্তরাধিকারী কান্যকুব্জপতি দেবপাল চন্দেল্ল-রাজ যশোবর্ম্মাকে বৈকুণ্ঠ-মূর্ত্তি উপহার প্রদান করিয়াছিলেন। যদি এই চন্দেল্ল-রাজের (যশোবর্ম্মার) প্রশস্তিকারের বাক্যে আস্থা-স্থাপন করিতে হয়, তবে স্বীকার করিতে হইবে, তিনি গৌড়পতিকেও ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিয়ছিলেন। কারণ, এই শিলালিপির একটি (২৩) শ্লোকে যশোবর্ম্মা “গৌড়ক্রীড়ালতাসি”, [ক্রীড়ার লতার ন্যায় গৌড়গণকে ছেদনক্ষম অসি] এবং “শিথিলিত-মিথিল” [মৈথিলগণের বলক্ষয়কারী] বলিয়া বর্ণিত হইয়াছেন।

 কালের কঠোরশাসনে কিছুরই স্থিতিশীল হইবার সাধ্য নাই। হয় ঊর্দ্ধগতি উন্নতি, আর না হয় নিশ্চলভাবে থাকিতে গেলে, কালস্রোতের খরবেগে অধোগতি। দেবপালের মৃত্যুর পর, অর্দ্ধশতাব্দী কাল গৌড়রাজ্য উন্নতিহীন নিশ্চল অবস্থায় ছিল। কিন্তু তখন হইতেই, ভিতরে ভিতরে, অধঃপাতের সূত্রপাত হইতেছিল। দ্বিতীয় গোপালের পুত্র এবং উত্তরাধিকারী দ্বিতীয় বিগ্রহপালের ভাগ্যে অখণ্ড গৌড়-রাজ্য সম্ভোগ ঘটিয়া উঠিয়াছিল না। দ্বিতীয় বিগ্রহপালের পুত্র এবং উত্তরাধিকারী মহীপালের বাণনগরে প্রাপ্ত তাম্রশাসনে উক্ত হইয়াছে, “(দ্বিতীয় বিগ্রহপাল) হইতে শ্রীমহীপালদেব নামক অবনীপাল জন্মগ্রহণ করিয়ছিলেন। তিনি বাহুবলে যুদ্ধে সকল বিপক্ষ নিপাতিত করিয়া, অনধিকারী কর্ত্তৃক বিলুপ্ত পিতৃরাজ্যের উদ্ধার সাধন করিয়া, ভূপালগণের মস্তকে চরণপদ্ম স্থাপন করিযাছিলেন।” এখানে স্পষ্টই বলা হইয়াছে—গৌড়রাজ্যের কতকাংশ দ্বিতীয় বিগ্রহপালের হস্তচ্যুত হইয়াছিল। নিরর্থক হইলে, এরূপ অগৌরবকর কথা কদাচ তাঁহার পুত্রের তাম্রশাসনে স্থানলাভ করিত না। এখন জিজ্ঞাস্য, কাহার দ্বারা দ্বিতীয় বিগ্রহপাল রাজ্যভ্রষ্ট হইয়াছিলেন?

  1. Epigraphia Indica, Vol. I, pp. 122-135.

৩৪