হইয়াছে।[১] মহীপালের পুত্র নয়পালের সময়ের (১৫শ বর্ষের) গয়ার কৃষ্ণদ্বারকা-মন্দিরের শিলালিপিতেও মাত্রার উপর রেফ দৃষ্ট হয় না।[২] সুতরাং রেফ দেওয়ার হিসাবে দেখিতে গেলে, এই লিপিকে মহীপালের দিনাজপুরে প্রাপ্ত তাম্রশাসনেরও পূর্ব্বে [দশম শতাব্দীতেই] স্থাপিত করিতে হয়।
“কাম্বোজান্বয়জ”-অর্থে “কাম্বোজ”-দেশীয় বা জাতীয় লোকের বংশ-সম্ভূত। ফরাসী পণ্ডিত ফুসে লিখিয়াছেন,—নেপালে প্রচলিত কিম্বদন্তী অনুসারে, তিব্বত-দেশেরই নামান্তর “কাম্বোজ দেশ”।[৩] সুতরাং “কাম্বোজান্বয়জ গৌড়পতি” তিব্বত বা তৎপার্শ্ববর্ত্তী কোনও প্রদেশ হইতে আসিয়া, বরেন্দ্র জয় করিয়া, বরেন্দ্রী বা বরেন্দ্রের নামান্তর গৌড়ের নামানুসারে, গৌড়পতি উপাধি গ্রহণ করিয়াছিলেন, এই রূপই মনে করিতে হয়। ৯৬৬ খৃষ্টাব্দে “কাম্বোজান্বয়জ” গৌড়পতি শিবমন্দির নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। ইহার কয়েক বৎসর পূর্ব্বেই হয়ত তিনি হিমালয় প্রদেশ হইতে বহির্গত হইয়া, বরেন্দ্র অধিকার করিয়াছিলেন। দ্বিতীয় বিগ্রহপাল যে “অনধিকৃত” বা অনধিকারী কর্ত্তৃক রাজ্যচ্যুত হইয়াছিলেন, “কাম্বোজান্বয়জ গৌড়পতিই” সেই “অনধিকৃত”।
“কাম্বোজ-বংশজ গৌড়পতি” গৌড়-রাজ্যের কোন্ কোন্ অংশ অধিকার করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন, তাহা বলা কঠিন। বরেন্দ্রদেশ তাঁহার পদানত হইয়াছিল, এরূপ নিঃসন্দেহে মনে করা যাইতে পারে। কারণ, বরেন্দ্রের কেন্দ্রস্থলেই—বাণনগরে,—তাঁহার কীর্ত্তিচিহ্ন পাওয়া গিয়াছে; এবং বরেন্দ্রদেশের অনেক স্থানে যে কতক পরিমাণে তিব্বতীয় বা মোঙ্গলীয় আকারের কোচ, পলিয়া, রাজবংশী প্রভৃতি জাতি দেখা যায়, ইহারা তিব্বতীয় বা ভুটিয়া আক্রমণকারিগণের অর্থাৎ কাম্বোজ-বংশজ গৌড়পতির অনুচরগণের বংশধর বলিয়াই মনে হয়। এরূপ অনুমান করিবার কারণ, কাম্বোজ-বংশজ গৌড়পতির সঙ্গে ভিন্ন বহুসংখ্যক মোঙ্গলীয় ঔপনিবেশিকের বরেন্দ্রে, অর্থাৎ করতোয়ার পশ্চিমতীরবর্ত্তী ভূভাগে, প্রবেশের আর কোন অবসর দেখিতে পাওয়া যায় না। করতোয়ার পূর্ব্বদিক্বাসী, কামরূপী ব্রাহ্মণগণের যজমান,কোচ এবং রাজবংশিগণের সহিত বরেন্দ্রবাসী, বর্ণব্রাহ্মণের যজমান, কোচ, পলিয়া, এবং রাজবংশিগণের কোনরূপ সম্বন্ধের পরিচয় পাওয়া যায় না।
বরেন্দ্র যখন “কাম্বোজ-বংশজ গৌড়পতির” করতলগত, এবং বিজিত দ্বিতীয় বিগ্রহপাল যখন গৌড়রাষ্ট্রের কোনও নিভৃত কোণে, [মগধে বা মিথিলায়,] লুক্কায়িত ছিলেন, তখন চন্দেল্ল-রাজ যশোবর্ম্মার উত্তরাধিকারী ধঙ্গদেব অঙ্গ ও রাঢ় আক্রমণ করিয়াছিলেন। খজুরাহোতে প্রাপ্ত ১০০২ খৃষ্টাব্দের একখানি শিলালিপিতে ধঙ্গ সম্বন্ধে উক্ত হইয়াছে—“‘তুমি কে? কাঞ্চীরাজপত্নী! তুমি
- ↑ Journal A. S. B. of 1892, part I, p. 78; Indian Antiquary, Vol. XXI, (1892), P. 97.
- ↑ বন্ধুবর শ্রীযুক্ত রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় এবং শ্রীযুক্ত প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় মহাশয় বরেন্দ্র-অনুসন্ধান-সমিতিকে এই শিলালিপির সুন্দর ছাপ প্রদান করিয়াছেন।
- ↑ V. A. Smith’s Early History of India, 2nd Ed., p. 173.
৩৭