পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গৌড়রাজমালা।

কে? অন্ধ্রাধিপস্ত্রী! তুমি কে? রাঢ়ারাজ-পত্নী! তুমি কে? অঙ্গরাজ-পত্নী!’ সমর-জয়ী রাজার (ধঙ্গের) কারাগারে সজলনয়না শক্রপত্নীগণের মধ্যে এইরূপ কথোপকথন হইয়াছিল।”[১]

 এই শ্লোকে কি পরিমাণে ঐতিহাসিক তথ্য নিহিত আছে,—ধঙ্গ প্রকৃত প্রস্তাবে রাঢ় এবং অঙ্গের মহাসামন্তদ্বয়কে পরাজিত করিয়া, উভয়ের পত্নীগণকে বন্দিনী করিয়া লইয়া যাইতে সমর্থ হইয়ছিলেন কিনা,—কেবল এক পক্ষের প্রশস্তিকারের কথা শুনিয়া, তাহা বলা কঠিন। কিন্তু তৎকালে গৌড়রাজ্যের অংশ বিশেষের সহিত জেজাভুক্তির যে ঘনিষ্ট সম্বন্ধ ছিল, অন্যত্রও তাহার কিছু কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। চন্দেল্ল-রাজগণের যে দুইখানি শিলালিপি হইতে প্রমাণ উদ্ধৃত হইয়াছে, এই দুই খানিরই লেখক গৌড় বা বাঙ্গালী। প্রথম খানি “সংস্কৃতভাষাবিদ্ গৌড়কায়স্থ [করণিক] জগ্ধের দ্বারা” লিখিত; দ্বিতীয় লিপির লেখক,—গৌড়কায়স্থ জয়পাল।

 পালরাজ্যের কেন্দ্র বরেন্দ্র যখন কাম্বোজ-বংশজ গৌড়পতির পদানত, এবং রাঢ় ও অঙ্গ চন্দেল্ল-রাজ ধঙ্গ কর্ত্তৃক আক্রান্ত, তখন প্রতিযোগী রাষ্ট্রকূট রাজ্যের এবং প্রতীহার-রাজ্যের অবস্থা আরও শোচনীয় হইয়া দাঁড়াইয়াছিল। ৯৭৩ খৃষ্টাব্দে চালুক্য-বংশীয় তৈলপ, শেষ রাষ্ট্রকূট-নৃপতি দ্বিতীয় কর্ক্করাজকে পরাভূত করিয়া, দক্ষিণাপথে চালুক্য-প্রাধান্য পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন। প্রতীহার-বংশেরও অধঃপতনের আর বড় বিলম্ব ছিল না। কচ্ছপঘাত-বংশীয় বজ্রদামন কান্যকুব্জের প্রতীহার-রাজকে পরাভূত করিয়া, গোপদ্রি বা গোয়ালিয়র অধিকার করিয়াছিলেন। এতদ্ব্যতীত আরও দুইটি অভিনব প্রতিদ্বন্দ্বী—পরমার-রাজ বাক্‌পতি-মুঞ্জরাজের (৯৭৪, ৯৭৯ খৃঃ অঃ) বাহুবলে উন্নীত মালবরাজ্য এবং অনহীলপাটকের চৌলুক্যবংশীয় মূলরাজ-(৯৭৪–৯৯৫ খৃঃ অঃ)প্রতিষ্ঠিত গুজরাত-রাজ্য অভ্যুদিত হইয়া, উত্তরাপথকে অধিকতর বিশৃঙ্খল এবং দুর্ব্বল করিয়া তুলিয়াছিল। কিন্তু এই সময়ে, আনুমানিক ৯৮০ খৃষ্টাব্দে, দ্বিতীয় বিগ্রহপালের পুত্র মহীপাল পিতৃ-সিংহাসনে আরূঢ় হইয়া, পুনরায় গৌড়রাষ্ট্রের ঐক্যসাধনে এবং পাল-রাজ্যকে আরও প্রায় সার্দ্ধ শতাব্দীর পরমায়ু প্রদানে সমর্থ হইয়াছিলেন।

 “অনধিকারী কর্ত্তৃক বিলুপ্ত পিতৃরাজ্য” বা কাম্বোজ-জাতীয় বিজেতার অধিকৃত বরেন্দ্রের উদ্ধার-সাধন মহীপালের প্রথম, এবং [বাণনগরে প্রাপ্ত তাম্রশাসন-মতে], প্রধান কীর্ত্তি। ধর্ম্মপাল এবং দেবপালের ন্যায় মহীপালও দীর্ঘকাল গৌড়-সিংহাসনে অধিরূঢ় ছিলেন। তারানাথ লিখিয়া গিয়াছেন,—মহীপাল ৫২ বৎসর রাজত্ব করিয়াছিলেন। একখানি পিত্তলের মূর্ত্তিতে কানিংহাম মহীপালের

  1. “का त्वं कांचीनृपति-वनिता का त्व मन्ध्राधिप-स्त्री
    का त्वं राढ़ा-परिवृढ़वधूः क त्व मङ्गेन्द्र-पत्नी।
    इत्यालापाः समर-जयिनो यस्य वैरि-प्रियानां
    कारागारे सजलनयने न्दीवराणां वभूवुः॥ (४६)॥”

    Epigraphia Indica, Vol. I, p. 145.

৩৮