বারাণসীধামকে কীর্ত্তিরত্নে সজ্জিত করিতে গিয়া, মহীপাল এমনই তন্ময় হইয়া পড়িয়াছিলেন যে, আর্য্যাবর্ত্তের অপরার্দ্ধের তীর্থক্ষেত্রের কীর্ত্তিরত্নের কি দশা হইতেছিল, সে দিকে দৃক্পাত করিবারও তাঁহার অবসর ছিল না। সারনাথের লিপি-সম্পাদনের ঠিক পূর্ব্ব বৎসর [১০২৫ খৃষ্টাব্দে] মামুদ সোমনাথের প্রসিদ্ধ মন্দির ধ্বংস করিয়াছিলেন, এবং কয়েক বৎসর পূর্ব্বে, [১০১৮ খৃষ্টাব্দে] মথুরা এবং কান্যকুব্জের মন্দিরনিচয় ভূমিসাৎ করিয়া, সুবর্ণ এবং রজতনির্ম্মিত দেবমূর্ত্তিসমূহ আত্মসাৎ করিয়াছিলেন। সাহি-রাজ্যের পতনে, বা কান্যকুব্জ এবং কালঞ্জর রাজ্যের বিপদে না হউক, মথুরার ন্যায় তীর্থক্ষেত্রের দেবমূর্ত্তি এবং দেবমন্দির নিচয়ের দুর্দ্দশায়, ধর্ম্মপ্রাণ মহীপালের হৃদয় দ্রবীভূত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তিনি স্বীয় রাজ্যের বহির্ভূত তীর্থক্ষেত্র সম্বন্ধে একান্ত উদাসীন ছিলেন। সুলতান মামুদের অভিযাননিচয় সম্বন্ধে গৌড়াধিপ মহীপালের এই প্রকার ঔদাসীন্য উত্তরাপথের সর্ব্বনাশের অন্যতম কারণ। যদি মহীপাল গৌড়রাষ্ট্রের সেনাবল লইয়া সাহি-জয়পাল, আনন্দপাল, বা ত্রিলোচনপালের সাহায্যার্থ অগ্রসর হইতেন, তবে হয়ত ভারতবর্ষের ইতিহাস স্বতন্ত্র আকার ধারণ করিত।
মহীপালের পুত্র এবং উত্তরাধিকারী নয়পাল, [তৃতীয় বিগ্রহপালের তাম্রশাসনে], “সকলদিকে প্রতাপ-বিস্তারকারী” এবং “লোকানুরাগভাজন” বলিয়া বর্ণিত হইয়াছেন। নয়পাল যখন গৌড়-সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন, তখন সকল দিকে না হউক, পশ্চিম দিকে প্রতাপ-বিস্তারের বিশেষ সুযোগ উপস্থিত হইয়াছিল। কোন কোন মুসলমান ইতিহাস-লেখক লিথিয়াছেন,—মামুদ যখন কান্যকুব্জ আক্রমণ করিয়াছিলেন, তখন কান্যকুব্জ-রাজ [রাজ্যপাল] তাঁহার অধীনতা স্বীকার করিয়াছিলেন বলিয়া, চন্দেল্ল-রাজ গণ্ড তাহাকে নিহত করিয়াছিলেন।[১] কচ্ছপঘাত-বংশীয় বিক্রমসিংহের [দুবকুণ্ডে প্রাপ্ত] ১১৪৫ বিক্রম-সংবতের [১০৮৮ খৃষ্টাব্দের] শিলালিপিতে উক্ত হইয়াছে, বিক্রমসিংহের প্রপিতামহ অর্জ্জুন, বিদ্যাধরের আদেশে [কার্য্যনিরতঃ], রাজ্যপাল নামক নরপালকে নিহত করিয়াছিলেন।[২] এই বিদ্যাধর চন্দেল্ল-রাজ গণ্ডের পুত্র এবং উত্তরাধিকারী বিদ্যাধর, এবং এই রাজ্যপাল কান্যকুব্জের প্রতীহার-বংশীয় রাজা রাজ্যপাল বলিয়া অনুমান হয়। মহোবায় প্রাপ্ত চন্দেল্ল-বংশের একখানি শিলালিপিতে সম্ভবত বিদ্যাধর সম্বন্ধে উক্ত হইয়াছে, তিনি কান্যকুব্জ-রাজের বিনাশবিধান করিয়াছিলেন,
- ↑ Elliot’s History of India, Vol. II, p. 463. মুসলমানলেখকগণ কালঞ্জরের রাজাকে নন্দা বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। চন্দেল্ল-রাজগণের শিলালিপি এবং তাম্রশাসনে প্রদত্ত বংশাবলী অনুসারে এই সময়ের কালঞ্জর-রাজের নাম “গণ্ড”। Epigraphia Indica, vol. VIII, app. I, p. 16. দ্রষ্টব্য।
- ↑ Epigraphia Indica, Vol. II, p. 237:—
“श्रीविद्याधर-देवकार्य्यनिरतः श्रीराज्यपालं हठात्
कंठास्थि-छिदनेकवाणनिवहै र्हत्वा महत्याहवे।”
৪৩