গৌড়রাজমালা।
পাল দাহলাধিপতি [কলচুরি] কর্ণকে যুদ্ধে পরাজিত করিয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহাকে উন্মূলিত করিয়াছিলেন না; তাঁহার দুহিতা যৌবনশ্রীর পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন।” বিবাদপ্রিয় কর্ণই, সম্ভবত নয়পালের মৃত্যুর পর, আবার গৌড়-রাজ্য আক্রমণ করিতে আসিয়া, পরাভূত হইয়া কন্যাদান করিয়া, গৌড়াধিপের প্রতি অর্জ্জন করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন।
কিন্তু তৃতীয় বিগ্রহপালের আমলেই, আর এক বহিঃশত্রু আসিয়া, পাল-বংশের অধঃপতনের বীজ বপন করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। এই অভিনব শক্র, কল্যাণের[১] চালুক্যরাজ আহবমল্ল প্রথম সোমেশ্বরের (রাজত্ব ১০৪০-১০৭১ খৃষ্টাব্দের মধ্যে) দ্বিতীয় পুত্র, বিক্রমাদিত্য। কুমার বিক্রমাদিত্য, পিতার আদেশক্রমে দিগ্বিজয়ে বহির্গত হইয়া, গৌড় এবং কামরূপ আক্রমণ করিয়াছিলেন। বিহ্লন “বিক্রমাঙ্কদেব-চরিতে” (৩।৭৪) এই দিগ্বিজয়-প্রসঙ্গে লিখিয়া গিয়াছেনঃ—
“गायन्तिस्म गृहीत-गौड़-विजय-स्तम्बेरमस्याहवे
तस्योन्मूलित-कामरूप-नृपति-प्राज्य-प्रतापश्रियः।
भानु-स्यन्दन-चक्रघोष-मुषित-प्रत्यूषनिद्रारसाः
पूर्वाद्रेः कटकेषु सिद्धवनिताः प्रालेयशुद्धं यशः॥”[২]
“সূর্য্যের রথচক্রের শব্দে প্রত্যূষে নিদ্রাভঙ্গ হইলে, সিদ্ধ-বনিতাগণ পূর্ব্বাদ্রির কটিদেশে, যুদ্ধে গৌড়ের বিজয়হস্তী-গ্রহণকারী এবং কামরূপাধিপতির বিপুল-প্রতাপ-উন্মূলনকারী কুমার বিক্রমাদিত্যের তুষারশুভ্র যশ গান করিয়াছিল।”
কুমার বিক্রমাদিত্য, উত্তরকালে যখন “ত্রিভুবনমল্ল পর্মাড়িদেব” উপাধি গ্রহণ করিয়া, কল্যাণের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন, (১০৭৭-১১২৫ খৃষ্টাব্দ) তখন বিহ্লন কাশ্মীর হইতে আসিয়া, তাঁহার সভার “বিদ্যাপতির” বা প্রধান পণ্ডিতের পদলাভ করিয়াছিলেন। বিদ্যাপতি বিহ্লনের এই গৌড়-কামরূপ-বিজয়-কাহিনী অক্ষরে অক্ষরে সত্য না হইলেও, একেবারে অমূলক নহে। বিহ্লন “বিক্রমাঙ্কদেব-চরিতে” (১৮।১০২) স্বীয় প্রভুকে “কর্ণাটেন্দু” বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন; এবং কহ্লণ “রাজতরঙ্গিনীতে” (৭।৯৩৬) বিহলনের যে বিবরণ প্রদান করিয়াছেন, তাহাতে “পর্মাড়ি-ভূপতি” বা বিক্রমাদিত্যকে “কর্ণাট” বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন।[৩] সুতরাং কর্ণাট বলিতে তৎকালে যে কল্যাণের চালুক্যগণের রাজ্য বুঝাইত, এ বিষয়ে আর সংশয় নাই। গৌড়ের সেন-রাজগণের শিলালিপিতে এবং তাম্রশাসনে দেখিতে পাওয়া যায়,—এক সময়ে গৌড়-রাজ্যের একাংশের [রাঢ়ের] সহিত কর্ণাট-রাজ্যের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল। সেনবংশের প্রথম নরপতি বিজয়-
৪৬