পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কৈবর্ত্ত-বিদ্রোহ।

 এই মহাবাহিনী লইয়া, রামপাল নৌকায় গঙ্গাপার হইয়াছিলেন। পাল-রাজের সেনার সহিত কৈবর্ত্ত-রাজের সেনার ভীষণ যুদ্ধ উপস্থিত হইয়াছিল। অবশেষে করিপৃষ্ঠে অবস্থিত তীম বন্দী হইয়াছিলেন (২।১২-২০)। এই উপলক্ষে সন্ধ্যাকর এক পক্ষে সাগর এবং অপর পক্ষে ভীমের চরিত্রের বর্ণনা করিয়াছেন। শ্লেষের অনুরোধেই হউক, আর সত্যের অনুরোধেই হউক, ভীমের চিত্র উজ্জ্বল বর্ণে অঙ্কিত হইয়াছে। সাগরের ন্যায় ভীমও “লক্ষ্মী এবং সরস্বতী উভয়ের আবাস” বলিয়া বর্ণিত হইয়াছেন। ভীমকে নৃপতি রূপে প্রাপ্ত হইয়া, “বিশ্ব অতিশয় সম্পৎ লাভ করিয়াছিল,” এবং “সজ্জনগণ অযাচিত দান লাভ করিয়াছিল।” ভবানীর সহিত ভবানীপতি অধর্ম্মত্যাগী রাজা ভীমের উপাস্য দেবতা ছিলেন (২।২১-২৭)।

 সন্ধ্যাকর নন্দী-বর্ণিত এই প্রজা-বিদ্রোহের কিছু কিছু আভাস তৎকালের তাম্রশাসনে এবং শিলালিপিতেও পাওয়া যায়। কামরূপের রাজা বৈদ্যদেবের তাম্রশাসনে রামপাল সম্বন্ধে উক্ত হইয়াছে (৪ শ্লোক):—

 “যুদ্ধ-সাগর লঙ্ঘন করিয়া, ভীমরূপ রাবণ বধ করিয়া, জনকভূ উদ্ধার করিয়া, রামপাল ত্রিজগতে দাশরথি রামের ন্যায় যশ বিস্তার করিয়াছিলেন।”

 “রামপালচরিতের” টীকাকারের মতানুসারে, “জনকভূ” বরেন্দ্রী-অর্থে গ্রহণ করিলে, এই শ্লোকেও কৈবর্ত্ত-বিদ্রোহের প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৯০৮ সালের মার্চ্চ মাসে সারনাথের ভগ্নস্তূপের একাংশ খননকালে আবিষ্কৃত একখানি শিলালিপিতে[] “রামপালচরিতে” উল্লিখিত কয়েক জন পাত্রের এবং কোন কোন ঘটনার উল্লেখ দৃষ্ট হয়। কান্যকুব্জের গহড়বাল-রাজ গোবিন্দচন্দ্রের অন্যতমা মহিষী কুমরদেবী কর্ত্তৃক একটি বৌদ্ধবিহার-প্রতিষ্ঠা-উপলক্ষে এই শিলালিপি উৎকীর্ণ হইয়াছিল। ইহাতে বর্ণিত হইয়াছে,—“পীঠিকা”র বা “পীঠী”র দেবরক্ষিত নামক এক জন রাজা ছিলেন।

“गौड़ेद्वैतभटः सकाण्ड-पटिकः क्षत्रैक-चूड़ामणिः
प्रख्यातो महणाङ्गपः क्षितिभुजाम्मान्यो भवन्मातुलः।
तं जित्वा युधि देवरक्षित मधात् श्रीरामपालस्य यो
लक्ष्मीं निर्जित-वैरि-रोधनतया देदीप्यमानोदयाम्॥”

 “গৌড়ে অদ্বিতীয় যোদ্ধা, ধনুর্দ্ধর (?), ক্ষত্রকুলের একমাত্র চূড়ামণি, নরপালগণের সম্মানার্হ মাতুল, মহন নামক অঙ্গপতি ছিলেন। তিনি দেবরক্ষিতকে পরাজিত করিয়া, শক্রর বাধা বিদূরিত হওয়ায়, অধিকতর উজ্জ্বল শ্রীরামপালের রাজলক্ষ্মী অক্ষুণ্ণ রাখিয়াছিলেন।”

 “রামপালচরিতে” [২।৮ শ্লোকের টীকায়] রামপালের মাতুল মহন কর্ত্তৃক পীঠীপতি দেব-

  1. Epigraphia Indica, Vol. IX, pp. 323-326.

৪৯