গৌড়রাজমালা।
রক্ষিতের পরাজয় উল্লিখিত হইয়াছে। কুমরদেবীর এই শিলালিপির সাহায্যে রামপালের রাজত্বের সময় নিরূপণ করা যাইতে পারে। এই লিপিতে উক্ত হইয়াছে,—মহনদেব শঙ্করদেবী নাম্নী দুহিতাকে পীঠীপতির করে অর্পণ করিয়াছিলেন। কুমরদেবী এই শঙ্করদেবীর কন্যা, এবং গোবিন্দচন্দ্রের মহিষী। কুমরদেবী এবং গোবিন্দচন্দ্রের বংশাবলী পাশাপাশি রাখিলে দেখা যায়,—
পিতা | পিতা | ||||||||||||||||||||||||||
অঙ্গাধিপ মহনদেব। | ভগিনী=তৃতীয় বিগ্রহপাল-পত্নী। | গাহড়বাল চন্দ্রদেব। (খৃঃ অঃ + ১০৯০-১০৯৭ +) | |||||||||||||||||||||||||
শঙ্করদেবী। | রামপাল। | মদনচন্দ্র। | |||||||||||||||||||||||||
কুমরদেবী। | গোবিন্দচন্দ্র। (খৃঃ অঃ + ১১১৪-১১৫৪ +) | ||||||||||||||||||||||||||
অর্থাৎ মহনদেব গাহড়বাল-রাজ চন্দ্রদেবের সমকালবর্ত্তী ছিলেন। মহনদেব এবং রামপাল, সম্পর্কে মামা-ভাগিনেয় হইলেও, উভয়ে সম্ভবত সমবয়সী ছিলেন। “রামপালচরিতে” উক্ত হইয়াছে (৪।৮-১০ শ্লোক), মহনদেব (মথন) পরলোক গমন করিয়াছেন শুনিয়া, “মুদ্গিরিতে” (মুঙ্গেরে) অবস্থিত রামপাল গঙ্গাগর্ভে প্রবেশ করত তনুত্যাগ করিয়াছিলেন। সুতরাং রামপাল কান্যকুব্জ-রাজ চন্দ্রদেবের সমসাময়িক, এবং একাদশ শতাব্দের শেষ পাদ পর্য্যন্ত গৌড়-রাজ্যের রাজপদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, এরূপ অনুমান করা যাইতে পারে।
“রামপালচরিতের” যে অংশে ভীমের বন্ধনের পরবর্ত্তী ঘটনা সকল বর্ণিত হইয়াছে, তাহার টীকা নাই। মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের মতানুসারে, ভীম ধৃত হইলে, তদীয় সুহৃৎ হরি, ছত্রভঙ্গ বিদ্রোহী সেনা পুনঃ সম্মিলিত করিয়া, যুদ্ধার্থ অগ্রসর হইয়াছিলেন। ভীষণ যুদ্ধের পর, হরি ধৃত এবং নিহত হইয়াছিলেন। ভীমও সম্ভবত নিহত হইয়াছিলেন। এই রূপে বিদ্রোহানল নির্ব্বাপিত হইলে, পালবংশের জন্মভূমি [জনকভূ] আবার পাল-নরপালের হস্তগত হইয়াছিল।
বিদ্রোহ দমন করিয়া, রামপাল “রামাবতী” নামক এক নূতন নগর নির্ম্মাণ করিয়া, বরেন্দ্রভূমির শোভাবর্দ্ধন করিয়াছিলেন। তিনি এক দিকে যেমন অভিনব নগর-নির্ম্মাণে রত ছিলেন, আর এক দিকে তেমনি নষ্টপ্রায় গৌড়-রাজশক্তির পুনরুজ্জীবন-সাধনে যত্নবান হইয়াছিলেন। সন্ধ্যাকর লিখিয়াছেন—পূর্ব্বদিকের এক জন নরপতি, পরিত্রাণ পাইবার জন্য, রামপালকে বর-বারণ, নিজের রথ এবং বর্ম্ম উপহার প্রদান করিয়াছিলেন। যথা—
“स्वपरित्राण-निमित्तं पत्या यः प्राग्दिशीयेन।
वर-वारणेन च निज-स्यन्दन-दानेन वर्म्मणाराधे॥” ३৷४४॥
৫০