বরেন্দ্রবাসী সন্ধ্যাকর যাঁহাকে “প্রাগ্দিশীয়” বলিয়াছেন, তিনি সম্ভবত বাঙ্গালার পূর্ব্ব সীমান্তের কোন পার্ব্বত্য-প্রদেশের নৃপতি। রামপাল কামরূপ জয় করিয়া, গৌড়রাষ্ট্রভুক্ত করিয়াছিলেন [“বিগ্রহনির্জ্জিতকামরূপভৃৎ”]। এই কামরূপ-জয় যে সন্ধ্যাকর নন্দীর কল্পনা-প্রসূত নহে, কুমারপালের প্রসঙ্গে আমরা তাহা দেখিতে পাইব। রামপাল উৎকলে এবং কলিঙ্গেও স্বীয় প্রাধান্য-স্থাপনের চেষ্টা করিয়াছিলেন। সন্ধ্যাকর নন্দী লিখিয়াছেন—
“भवभूषण-सन्ततिभूव मनुजग्राह जित मुत्कलत्रं यः।
जगदवतिस्म समस्तं, कलिङ्गत स्तान् निशाचरान् निघ्रन्॥”३৷४५॥
“ভবভূষণ (চন্দ্রের) সন্ততির রাজ্য উৎকল জয় করিয়া, তৎপ্রতি যিনি অনুগ্রহ করিয়াছিলেন, এবং চৌরগণকে নিহত করিয়া, কলিঙ্গ হইতে আরম্ভ করিয়া সমস্ত জগৎ প্রতিপালন করিয়াছিলেন।”
রামপাল যখন গৌড়ের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত, তখন গঙ্গ-বংশীয় অনন্তবর্ম্মা-চোড়গঙ্গ [রাজত্ব ১০৭৮-১১৪২ খৃষ্টাব্দ] কলিঙ্গের রাজা ছিলেন, এবং তিনিই উৎকল অধিকার করিয়াছিলেন। গঙ্গ-বংশীয় নৃপতিগণ চন্দ্র বংশোদ্ভব বলিয়া পরিচিত ছিলেন।[১] সুতরাং এ স্থলে সন্ধ্যাকর নন্দী চোড়-গঙ্গকে স্মরণ করিয়াই, উৎকলকে “ভবভূষণ-সন্ততিভূ” বলিয়াছেন।[২] কিন্তু রামপাল কর্ত্তৃক চোড়-গঙ্গের এই পরাজয়-কাহিনী কতদূর সত্য, তাহা নির্ণয় করা কঠিন। গঙ্গ-বংশীয় নৃপতিগণের মধ্যে চোড়-গঙ্গ সর্ব্বাপেক্ষা পরাক্রান্ত ছিলেন। গঙ্গ-বংশীয় নৃপতিগণের তাম্রশাসনে উক্ত হইয়াছে,—চোড়-গঙ্গ গঙ্গার তীর পর্য্যন্ত স্বীয় আধিপত্য বিস্তার করিয়াছিলেন, এবং গঙ্গাতীরবর্ত্তী যুদ্ধক্ষেত্রে “মন্দারাধিপতিকে” পরাজিত এবং আহত করিয়াছিলেন।[৩] এই সূত্রেই হয়ত কলিঙ্গ-পতির সহিত গৌড়-পতির সংঘর্ষ উপস্থিত হইয়াছিল, এবং কলিঙ্গ-পতিকে প্রতিদ্বন্দ্বীর অনুগ্রহ প্রার্থনা করিতে হইয়াছিল। চোড়-গঙ্গের অতি দীর্ঘকালব্যাপী রাজত্বের প্রথম ভাগে, তাঁহাকে রামপালের সম্মুখীন হইতে হইয়াছিল। সেই সময়, গৌড়াধিপের নিকট মস্তক অবনত করা অসম্ভব
- ↑ अजनि रजनिजानि-वंशचूड़ा-
मणि रणिमादि-गुणेन चोड़गङ्गः॥Inscription of Svapnesvara, Verse 7, Epigraphia Indica, Vol. VI, p. 200
- ↑ “রামচরিতের” ভূমিকায় শাস্ত্রী মহাশয় লিখিয়াছেন,—“He (Rāmapāla) conquered Utkala and restored it to the Nāgvamsis” ইহা দ্বারা বুঝা যায়, শাস্ত্রী মহাশয় “ভবভূষণ-সন্ততি”-পদ “নাগবংশী”-অর্থে গ্রহণ করিয়াছেন। নাগ ভবের (শিবের) ভূষণ হইলেও, নাগবংশীয় কোন রাজা উড়িষ্যায় কখনও রাজত্ব করিয়াছেন বলিয়া এ পর্য্যন্ত জানা যায় নাই। পক্ষান্তরে “রামচরিতের” (২।৫) টীকা হইতে জানা যায়, রামপালের রাজ্যলাভের অব্যবহিত পূর্ব্বে, উৎকলে “কেশরী”-উপাধিধারী একজন নৃপতি ছিলেন। ভীমের সহিত যুদ্ধোদ্যত রামপালের সহিত যাঁহারা যোগদান করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে “উৎকলেশ কর্ণকেশীর”র পরাভবকারী দণ্ডভুক্তি-ভূপতি জয়সিংহের নাম দৃষ্ট হয়।
- ↑ J. A. S. B., Vol. LXV, Part. p. 241.
৫১