গৌড়রাজমালা।
বৈদ্যদেবের তাম্রশাসন ১১৪২ খৃষ্টাব্দে সম্পাদিত বলিয়া মনে করিবার আরও একটি কারণ ভিনিস্ কর্ত্তৃক সূচিত হইয়াছে। তিনি লিখিয়াছেন,—এই লিপির “অক্ষরের সহিত বিজয়সেনের দেবপাড়া-লিপির অক্ষরের সাদৃশ্য আছে; কিন্তু (বিজয়সেনের লিপির অক্ষরের অপেক্ষা এই লিপির অক্ষরের) বর্ত্তমান বঙ্গাক্ষরের সহিত সাদৃশ্য আরও অধিক।” বিজয়সেনের লিপির অক্ষরের সহিত বৈদ্যদেবের তাম্রশাসনের অক্ষর মিলাইলে, কথাটা ঠিক বলিয়া মনে হয় না।[১] দেবপাড়ার শিলালিপির ত, ন, ম, র এবং স বর্ত্তমান বঙ্গাক্ষরের অনুরূপ; কিন্তু বৈদ্যদেবের তাম্রশাসনের ত, ন, ম, র এবং স পুরাতন ঢঙ্গের। সুতরাং অক্ষরের হিসাবে, বৈদ্যদেবের তাম্রশাসনকে দেবপাড়ার শিলালিপির কিছুকাল পূর্ব্বে স্থাপন না করিয়া উপায় নাই। খৃষ্টীয় দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দে, বর্ত্তমান বঙ্গাক্ষরের উদ্ভবকালে, যে লিপিতে আধুনিক বঙ্গাক্ষরের সংখ্যা যত বেশী লক্ষিত হয়, সেই লিপিকে তত আধুনিক মনে করাই সঙ্গত।
লক্ষ্মীসরাইয়ের নিকটবর্ত্তী জয়নগর গ্রামে প্রাপ্ত একখানি শিলাখণ্ডে “যে ধর্মা” ইত্যাদি বৌদ্ধমন্ত্র এবং “শ্রীমন্ মদনপালদেব-রাজ্যে সম্বৎ ১৯ আশ্বিন ৩০” উৎকীর্ণ রহিয়াছে।[২] মদনপালের রাজ্যের ১৯ সম্বতের বা ১১৩১ খৃষ্টাব্দের পূর্ব্বেই, সম্ভবত বর্ম্মণ-বংশের অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গে, বঙ্গ স্বাতন্ত্র্য অবলম্বন করিয়াছিল, এবং সামন্তসেনের পৌত্র বিজয়সেন গৌড়রাষ্ট্রের কেন্দ্র বরেন্দ্রমণ্ডলে সেনরাজ্যের ভিত্তিস্থাপনের উদ্যোগ করিতেছিলেন।
মগধে আবিষ্কৃত শিলালিপিতে মহেন্দ্রপাল এবং গোবিন্দপাল নামক আরও দুই জন পাল নরপালের পরিচয় পাওয়া যায়। শিলালিপিতে এবং তাম্রশাসনে প্রত্যেক পাল-নরপালের নামের অন্তে, ‘দেব’-শব্দ দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু যে দুইখানি শিলালিপিতে মহেন্দ্রপালের নাম উল্লিখত হইয়াছে, তাহার কোন খানিতেই মহেন্দ্রপালকে “মহেন্দ্রপালদেব” বলা হয় নাই।[৩] ইহাতে মনে হয়, মহেন্দ্রপাল পাল-নরপালগণের বংশ-সম্ভূত এবং তাঁহাদের স্থলবর্ত্তী নাও হইতে পারেন। কিন্তু গোবিন্দপালের যে পরিচয় পাওয়া যায়, তাহা হইতে অনুমান হয়, তিনি পাল-রাজগণের বংশোদ্ভব এবং পালবংশের শেষ নৃপতি। নেপাল হইতে সংগৃহীত এবং লণ্ডনের রয়াল এসিয়াটিক্ সোসাইটীর পুস্তকালয়ে রক্ষিত একখানি হস্তলিখিত “অষ্টসাহশ্রিকা প্রজ্ঞা-পারমিতা” গ্রন্থের সমাপ্তি-বাক্যের পরে লিখিত আছে,—“পরমেশ্বর-পরমভট্টারক-পরমসৌগত-মহারাজাধিরাজ-শ্রীমদ্গোবিন্দপালবিজয়-রাজ্য-সম্বৎ ৪॥” এই পুস্তকের লেখায় ব্যবহৃত অক্ষরের মধ্যে ত, ন, ম এবং র দেবপাড়ার শিলালিপির ত, ন, ম এবং রএর মত বর্ত্তমান বঙ্গাক্ষরের ঢঙ্গের।[৪] গয়ার একখানি শিলালিপি হইতে গোবিন্দপালের রাজ্যের অবসান-
- ↑ Cunningham’s Archæological Survey Report, Vol. III, p. 125.
- ↑ Cunningham’s Archæological Report, Vol. III, pp. 123-124.
- ↑ Cf. Epigraphia Indica, Vol. I, plate 19, and the same Vol. II, plates 29–33.
- ↑ The Journal of the Royal Asiatic Society, New Series, Vol. VIII (1876), p. 3 and plate 2. (Cowell and Eggelling’s Catalogue of Buddhist Sanskrit Manuscripts in the possession of R. A. S.]
৫৪