পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গৌড়রাজমালা।

“जातो वल्लालसेनो गुणि-गणित स्तस्य दौहित्र-वंशे।”

 “আদিশূর রাজা পঞ্চগোত্রে পঞ্চব্রাহ্মণ আনয়ণ করিলেন [পঞ্চব্রাহ্মণের পরিচয়] এহি পঞ্চগোত্রে পঞ্চব্রাহ্মণ সংস্থাপন করিয়া আদিশূর রাজার সর্গারোহণ॥ তদন্তে কিছুকালানন্তর তত দহিত্র কুলেত উদ্ভব হইলেন বল্লালসেন [বল্লালসেন কর্ত্তৃক কুলমর্য্যাদা স্থাপন এবং রাঢ়ী ও বারেন্দ্র-বিভাগ] ইত্যবকাশে অন্যান্য দেশীয় রাজাসকল ব্রাহ্মণহীন দেশ বিবেচনা করিয়া বল্লালসেনের নিকট ব্রাহ্মণ যাচিঞা করিয়া কহিলেন সুনহে বল্লালসেন তোমার মাতামহ কুলোদ্ভব আদিসূর পঞ্চগোত্রে পঞ্চব্রাহ্মণ আনয়ন করিয়া গৌড়মণ্ডল পবিত্র করিয়াছেন। আমরা যবনাক্রান্ত দেশে বাস করি আমারদিগের দেশে কিঞ্চিৎ ব্রাহ্মণ প্রেরণ করিয়া আমারদিগের দেশ পবিত্র করি।”[]

 আদিশূর সম্বন্ধে যে সকল জনশ্রুতি প্রচলিত আছে, তন্মধ্যে এইটিই সর্ব্বাপেক্ষা প্রবল। কুলজ্ঞগণের মুখ্য উদেশ্য ইতিহাস-সঙ্কলন নহে, বংশাবলী-রক্ষা। বংশাবলী অনুসারে হিসাব করিলে, আদিশূরের যে সময় নির্দ্ধারিত হয়, তাহার সহিত এই জনশ্রুতির সামঞ্জস্য করা যাইতে পারে। “গৌড়ে ব্রাহ্মণ”-কার বারেন্দ্র-ব্রাহ্মণগণ সম্বন্ধে লিখিয়াছেন,[]—“শাণ্ডিল্য-গোত্রীয় বর্ত্তমান ব্যক্তির পুরুষ সংখ্যা ভট্টনারায়ণ হইতে ৩৬।৩৭ এবং ৩৮ পুরুষ, কাশ্যপগোত্রে ৩১।৩২।৩৩।৩৪ পুরুষ, ভরদ্বাজগোত্রে ৩৫ হইতে ৩৯ পুরুষ, কিন্তু বাৎস্যগোত্রে ২৫ হইতে ২৮ পুরুষ দৃষ্ট হয়।” রাঢ়ীয় সমাজে ৩৫ হইতে ঊর্দ্ধতন পর্য্যায়ের লোক বিরল। বাৎস্যগোত্র ছাড়িয়া দিলে, বর্ত্তমান কালকে

  1. বারেন্দ্র-কুলপঞ্জিকার ঐতিহাসিক অংশ “আদিশূর রাজার ব্যাখ্যা” নামে পরিচিত। লালোর-নিবাসী শ্রীযুত মনোমোহন মুকুটমণির, মাঝগ্রামের শ্রীযুত জানকীনাথ সার্ব্বভৌমের, এবং রামপুর-বোয়ালিয়ার শ্রীযুত নৃত্যগোপাল রায় মহাশয়-সংগৃহীত পুঠিয়া নিবাসী ৺ মহেশচন্দ্র শিরোমণির ঘরের পুস্তক মধ্যে পাঁচ প্রকার “আদিশূর রাজার ব্যাখ্যার” পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। তন্মধ্যে দুই খানিতে বল্লালসেন আদিশূরের দৌহিত্র-বংশোদ্ভব বলিয়া কথিত। উপরে তাহা উদ্ধৃত হইল। “গৌড়েব্রাহ্মণ”-গ্রন্থে (দ্বিতীয় সংস্করণ, ৯৬ পৃ) উদ্ধৃত একটি শ্লোকে কথিত হইয়াছে—রাজা শ্রীধর্ম্মপাল ভট্টনারায়ণের পুত্র আদিগাঞিকে যজ্ঞান্তে দক্ষিণা-দানার্থ ধামসার গ্রাম দান করিয়াছিলেন। শ্রীযুত নগেন্দ্রনাথ বসুর মতানুসারে, এই ধর্ম্মপালকে যদি পালবংশীয় ধর্ম্মপাল মনে করা যায়, তবে আদিশূরকে ধর্ম্মপালের পিতা গোপালের তুল্যকালীন বিবেচনা করিতে হয়। এইরূপ সিদ্ধান্ত “গৌড়ে ব্রাহ্মণে” ধৃত (৮৩ পৃঃ) “ভাদুড়ি-কুলের বংশাবলীর” নিম্নোক্ত বচনের বিরোধী—

    “तत्रादिशूरः शूरवंशसिंहो विजित्य वौद्धं नृपपालवंशं।
    शशास गौड़ं इत्यादि।

    “গৌড়েব্রাহ্মণ”-ধৃত এই শেষোক্ত বচন আবার শ্রীযুত নগেন্দ্রনাথ বসু কর্ত্তৃক “বারেন্দ্র-কুলপঞ্জিকা”-ধৃত, “শাকে বেদকলম্বষট্‌ক-বিমিতে রাজাদিশূরঃ স চ” (“বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, প্রথম ভাগ, ৮৩ পৃঃ) এই বচনের, অর্থাৎ আদিশূর ৬৫৪ শকাব্দে বর্ত্তমান ছিলেন এই মতের, বিরোধী। যে যে কুলজ্ঞগণের সহিত আলাপ করিয়াছি, তাঁহারা এই সকল বচনের কোনটির বিষয়ই অবগত নহেন। সুতরাং এই সকল বচন প্রবল জনশ্রুতিমূলক বলিয়া স্বীকার করা যায় না। আদিশূর সম্বন্ধে যদি কোনও জনশ্রুতি নির্ভরযোগ্য বিবেচিত হয়, তবে তাহা উপরে উদ্ধৃত আদিশূর ও বল্লালসেনের সম্বন্ধবিষয়ক জনশ্রুতি। “গৌড়ব্রাহ্মণ”-ধৃত “ভাদুড়ী-কুলের বংশাবলীর” বচন প্রকারান্তরে ইহারই পোষকতা করে; এবং “লঘুভারতকার”ও আদিশূর কর্ত্তৃক গৌড়ের পালবংশ উচ্ছেদের উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন (“গৌড়েব্রাহ্মণ”, ৩২ পৃঃ ৪নং টীকা)।

  2. ১০৯ পৃঃ, টীকা।

৫৮