গৌড়রাজমালা।
রাখালবাবুর দ্বিতীয় যুক্তি,—বোধগয়ার দুইখানি শিলালিপির[১] উপসংহারে আছে—
“श्रीमल्लख्वणसेनस्यातीतराज्ये सं ५१ भाद्र दिने २९”
“श्रीमल्लक्ष्मणसेन-देवपादाना-मतीतराज्ये सं ७४ वैशाख्य-वदि १२ गुरौ॥”
“শ্রীমল্লক্ষ্মণসেনস্যাতীতরাজ্যে সং ৫১”—ইহার অর্থ লক্ষ্মণসেনের রাজ্য লুপ্ত হওয়ার পর হইতে গণিত ৫১ সম্বতে, অথবা লক্ষ্মণসেনের রাজ্যলাভ হইতে গণিত ৫১ সম্বতে, অথচ লক্ষ্মণসেনের রাজ্যলোপের পরে। কিল্হর্ণ এক সময় শেষোক্ত অর্থ গ্রহণ করিয়া, সং ৫১ = ১১২০ + ৫১ = ১২৭১ খৃষ্টাব্দ ধরিয়াছিলেন। রাখালবাবু এই অর্থই বজায় রাখিতে যত্ন করিয়াছেন। এখানে শব্দার্থ লইয়া কাট্যাং কুট্যাং না করিয়া, এই মাত্র বলিলেই যথেষ্ট হইবে যে, এই দুইখানি বোধগয়ার লিপির অক্ষরের, [বিশেষতঃ প এবং দএর,] সহিত গয়ার ১২৩২ সম্বতের (১১৭৫ খৃষ্টাব্দের) গোবিন্দপালদেবের গতরাজ্যের চতুর্দ্দশ সম্বৎসরের শিলা-লিপির,[২] অথবা বিশ্বরূপসেনের তাম্রশাসনের[৩] প এবং দ অক্ষরের তুলনা করিলে দেখিতে পাওয়া যায়,—১২৩২ সম্বতের গয়ার লিপির এবং বিশ্বরূপসেনের তাম্রশাসনের প এবং দ পুরাতন নাগরীর ঢঙ্গের; পক্ষান্তরে, আলোচ্য বোধগয়ার লিপিদ্বয়ের প এবং দ বর্ত্তমান বাঙ্গালা প এবং দ এর মত। ঠিক এই প্রকারের প এবং দ চট্টগ্রামে প্রাপ্ত ১১৬৫ শকাব্দের [১২৪৩ খৃষ্টাব্দের] তাম্রশাসনে[৪] দেখিতে পাওয়া যায়। দ্বাদশ শতাব্দের শেষ ভাগে গৌড়-মণ্ডলে পুরাতন নাগরী ঢঙ্গের প, এবং দ’ই যে প্রচলিত ছিল, বল্লভদেবের “শকে নগ-নভো-রুদ্রৈঃ সংখ্যাতে” অর্থাৎ ১১০৭ শকের (১১৮৪-৮৫ খৃষ্টাব্দের) আসামের তাম্রশাসন তাহার সাক্ষ্যদান করিতেছে।[৫] সুতরাং “শ্রীমল্লক্ষ্মণসেনস্যাতীতরাজ্যে সং ৫১” ১১৭১ খৃষ্টাব্দরূপে গ্রহণ না করিয়া, [আনুমানিক ১২০০ খৃষ্টাব্দে লক্ষ্মণসেনের মৃত্যু ধরিয়া,] ১২৫১ খৃষ্টাব্দ বলিয়া গ্রহণ করাই যুক্তিযুক্ত। এই সিদ্ধান্তের এক আপত্তি আছে। লক্ষ্মণসেনের “অতীতরাজ্য” হইতে কোন সম্বৎ প্রচলিত হইবার প্রমাণ নাই। উত্তরে বলা যাইতে পারে—গোবিন্দপালদেবের “গতরাজ্য” বা “বিনষ্টরাজ্য” হইতেও কোন সম্বৎ প্রচলিত নাই। পক্ষান্তরে গোবিন্দপালদেবের রাজ্যলাভ হইতেও কোন সম্বৎ প্রচলিত হওয়ার প্রমাণ নাই। “গতরাজ্যে” “অতীতরাজ্যে” বা “বিনষ্টরাজ্যে” প্রভৃতি বিশেষণ-পদের এই রূপ অর্থ প্রতিভাত হয়—গোবিন্দপালদেবের রাজ্যলোপের পরে, মগধে অরাজকতা উপস্থিত হইয়াছিল; লক্ষ্মণ-সেনের রাজ্যলোপের পরেও মগধে অরাজকতা উপস্থিত হইয়াছিল। তখন মগধে কেহ “প্রবর্দ্ধমান-বিজয়রাজ্য” প্রতিষ্ঠিত করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন না; অথবা যিনি মগধ করায়ত্ত করিয়াছিলেন, মগধবাসিগণ তাঁহাকে
- ↑ সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা, ১৭শ ভাগ (১৩১৮), ২১৪ এবং ২১৬ পৃঃ।
- ↑ Cunningham’s Archæological Survey Report, Vol. III, plate রাখালবাবু অনুসন্ধান-সমিতিকে এই শিলা-লিপির একখানি প্রতিলিপি প্রদান করিয়া উপকৃত করিয়াছেন।
- ↑ J. A. S. B., 1896, Part, I, plates I and II.
- ↑ J. A. S. B., 1874, Part I, plate XVIII.
- ↑ Epigraphia Indica, Vol. V, plates 19-20.
৬৪