সুলতান ইব্রাহিম (১০৪৮-১০৯৯ খৃষ্টাব্দ) সেল্জুক-সম্রাট্ মালিক শাহের তনয়ার সহিত স্বীয় তনয়ের বিবাহ দিয়া, রাজ্যের পশ্চিম প্রান্ত সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হইয়া, পুনঃ পুনঃ হিন্দুস্থান আক্রমণ করিয়া, অনেকগুলি স্থান এবং দুর্গ হস্তগত করিয়াছিলেন।[১] আলাউদ্দিন মসুদের সময় (১০৯৯–১১১৬ খৃষ্টাব্দ), “তুঘাতিগিন্ হিন্দুস্থানে [বিধর্ম্মিগণের সহিত] ধর্ম্ম-যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইবার জন্য, গঙ্গা পার হইয়াছিলেন; এবং এমন একস্থান পর্য্যন্ত গিয়াছিলেন, যেখানে সুলতান মামুদ ভিন্ন, আর কেহ কখনও সসৈন্য উপনীত হইতে পারেন নাই।”[২] সুলতান বহরাম শাহ (১১১৮-১১৫৮ খৃষ্টাব্দ), সেল্জুক-সুলতান সঞ্জরের প্রসাদে গজনীর সিংহাসন লাভ করিয়াছিলেন, এবং তাঁহার সময়ে ঘোরের অধিপতি আলাউদ্দীন একবার গজনীনগর ভস্মসাৎ করিয়াছিলেন। তিনিও হিন্দুস্থানে ধর্ম্ম-যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন বলিয়া উল্লিখিত আছে।[৩]
সুলতান মামুদের মৃত্যুর পরে, একাদশ শতাব্দে, পঞ্জাব এবং গৌড় রাজ্যের মধ্যবর্ত্তী ভূভাগের শাসন-ভার যাঁহাদিগের হস্তে ন্যস্ত ছিল, তাঁহাদিগের গজনী-রাজ্যবাসী তুরূষ্কগণের আক্রমণ-বেগ সহ্য করিবার শক্তি ছিল কিনা সন্দেহ। কিন্তু দ্বাদশ শতাব্দে এক দিকে গজনীরাজ্য যেমন নিতান্ত শোচনীয় অবস্থায় পতিত হইয়াছিল, অপর দিকে শাকম্ভরীর (আজমীরের) চৌহান-রাজগণ এবং কান্যকুব্জের গাহড়বাল-রাজগণ তেমনি পরাক্রান্ত হইয়া উঠিয়াছিলেন। এই সময় যদি চৌহান এবং গাহড়বাল মিলিত হইতে পারিতেন, তবে বোধ হয় অনায়াসে উত্তরাপথের সিংহদ্বার শত্রুশূন্য করিতে পারিতেন। কিন্তু, একশত বৎসরের মধ্যে কখনও ইঁহারা সম্মিলিত হইয়া শক্রর সম্মুখীন হইবার অবসর পাইয়াছিলেন না; অবশেষে মুইজুদ্দীন মহম্মদ ঘোরী আসিয়া, একে একে উভয় রাজ্য ধ্বংস করিয়াছিলেন। দুর্ব্বল গজনবী-তুরূষ্কগণও গাহড়বাল এবং চৌহান-রাজগণকে বিশ্রাম দিয়াছিলেন না। বহরাম শাহ সম্ভবত বারাণসী পর্য্যন্ত অগ্রসর হইয়াছিলেন। কুমরদেবীর সারনাথের শিলালিপিতে উক্ত হইয়াছে—গাহড়বাল-রাজ গোবিন্দচন্দ্র (+১১১৪—১১৫৪+ খৃষ্টাব্দ) মহাদেব কর্ত্তৃক “দুষ্ট তুরূষ্ক-সৈন্যের হস্ত হইতে বারাণসী রক্ষা করিবার জন্য” [বারাণসীং……… দুষ্ট-তুরূষ্ক-সুভটাদবিতুং] নিযুক্ত হইয়াছিলেন।[৪] তুরূষ্ক-সৈন্যের হস্ত হইতে গোবিন্দচন্দ্র যে বারণসীর উদ্ধার-সাধন করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন, সে বিষয়ে আর সন্দেহ নাই। কিন্তু বারাণসী রক্ষণ করিয়াই, তাঁহার তৃপ্ত হওয়া উচিত ছিল কি?
চৌহান-রাজ বীসলদেব, এবং গোবিন্দচন্দ্রের পুত্র গাহড়বাল-রাজ বিজয়চন্দ্রকেও, গজনবী-
৬৯