পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/১০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

লেখমালা।

প্রবৃত্ত হইবার সময় উপস্থিত হয় নাই। কারণ, এখনও বঙ্গদেশে কোনও অতিপুরাতন লিপি আবিষ্কৃত হয় নাই। এ পর্য্যন্ত যতদূর জানিতে পারা গিয়াছে, তাহাতে ধাতুপট্টলিপি অপেক্ষা শিলাপট্টলিপি যে সমধিক পুরাকালে প্রচলিত হইয়াছিল, তাহারই পরিচয় ভারতবর্ষের নানা স্থানে পুনঃ পুনঃ প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। তাহার কারণ কি, তাহা কৌতূহলের বিষয় হইয়া রহিয়াছে।

 এই কৌতূহল চরিতার্থ করিবার আশায় তথ্যানুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইলে দেখিতে পাওয়া যায়,—শিলাপট্টে উৎকীর্ণ প্রাচীন লিপিগুলি এক শ্রেণীর, এবং ধাতুপট্টে উৎকীর্ণ প্রাচীন লিপিগুলি পৃথক্ শ্রেণীর,—পৃথক্ প্রয়োজনে, পৃথক্ সময়ে উদ্ভাবিত।

 শিলাপট্টে উৎকীর্ণ প্রাচীন লিপিগুলি কোন না কোন শ্রেণীর স্মারক-লিপি। তাহাতে কুল-প্রশস্তি, রাজাজ্ঞা, ব্যক্তিগত-পুণ্যকীর্ত্তি-ঘোষণা, বিজয়-গৌরব অথবা উৎসব-ব্যাপার উৎকীর্ণ হইত। তাহা “স্থাবর” বলিয়াই কথিত হইতে পারে। কারণ, তাহা এক স্থান হইতে অন্য স্থানে—একের নিকট হইতে অন্যের নিকটে—পুনঃ পুনঃ স্থানান্তরিত বা হস্তান্তরিত হইবার প্রয়োজনে উদ্ভাবিত হয় নাই।

 ধাতুপট্টে উৎকীর্ণ প্রাচীন লিপিগুলি সেরূপ নহে। তাহা দানপত্ররূপে অথবা ক্রয়বিক্রয়-ব্যাপারের নিদর্শনপত্ররূপে—একস্থান হইতে অন্য স্থানে, একের নিকট হইতে অন্যের নিকটে,—পুনঃ পুনঃ স্থানান্তরিত বা হস্তান্তরিত হইবার প্রয়োজনেই উদ্ভাবিত হইয়াছিল। সুতরাং এই শ্রেণীর লিপির নিয়ত এক স্থানে প্রতিষ্ঠিত থাকিবার সম্ভাবনা ছিল না। যে প্রদেশের সহিত তাহার যথার্থ সম্বন্ধ, তথা হইতে বহুদূরবর্ত্তী স্থানেও তাহা অনেক সময়ে আবিষ্কৃত হইয়াছে।

 এই শ্রেণীর লিপি ধাতুপট্টে উৎকীর্ণ করাইবার প্রথা কত পুরাতন, এখনও তাহা নিঃসংশয়ে নির্ণীত হইতে পারে নাই। যে লিপি সর্ব্বপ্রাচীন বলিয়া কথিত হইতেছে, সেরূপ একখানি তাম্রপট্টলিপি[১] বরেন্দ্রমণ্ডলেই আবিষ্কৃত হইয়াছে। তাহা প্রথম কুমারগুপ্তের শাসন-সময়ের ১১৩ গুপ্ত-সংবৎসরে [৪৩৩ খৃষ্টাব্দে] উৎকীর্ণ ভূমিদানপত্র। এরূপ ভূমিদানপত্র “তাম্রশাসন”-নামে, অথবা কেবল “শাসন”-নামেও অভিহিত হইয়া থাকে। “শাসন”-শব্দের ব্যাখ্যা করিতে গিয়া, “মিতাক্ষরা”-টীকায় বিজ্ঞানেশ্বর লিখিয়া গিয়াছেন,—ইহা দ্বারা ভবিষ্যৎকালের নৃপতিবৃন্দ অনু-শাসিত হইবেন বলিয়া, ইহার নাম “শাসন” হইয়াছে। যথা,—

“शिष्यन्तो भविष्यन्तो नृपतयः अनेन।”

  1. রাজসাহীর অধীন নাটোর মহকুমার অন্তর্গত ধানাইদহ গ্রামে এই তাম্রপট্টলিপি একটি পুষ্করিণী-খননকালে আবিষ্কৃত হইবার পর, নাটোরের উকীল পরম স্নেহাস্পদ শ্রীমান্ জগদীশ্বর রায় আমাকে ইহার সংবাদ দান করেন। জমিদার শ্রীযুক্ত মৌলবী এরশাদ আলি খাঁ চৌধুরী তাম্রপট্টখানি আমাকে প্রদান করিবার পর, আমার অনুমতিক্রমে শ্রীযুক্ত রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ইহার পাঠোদ্ধার করিয়া, সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকায় [ষোড়শ ভাগ ১১২ পৃষ্ঠা] প্রকাশিত করিয়াছেন।