পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গরুড়স্তম্ভ-লিপি।

(২৬)

 তাঁহার বংশে ব্রহ্মা স্বয়ং পিতৃত্ব গ্রহণ করিয়া, আবার স্বয়ং পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন; [ইতি] এইরূপ মনে করিয়া, [লোকে] তাঁহার পূর্ব্ব-পুরুষগণের এবং তাঁহার আশ্রয় গ্রহণ করিত।[১]

(২৭)

 তাঁহার [সুকুমার] শরীর-শোভার ন্যায় লোক-লোচনের আনন্দদায়ক, তাঁহার উচ্চান্তঃকরণের অতুলনীয় উচ্চতার ন্যায় উচ্চতা-যুক্ত, তাঁহার সুদৃঢ় প্রেম-বন্ধনের ন্যায় দৃঢ়সংবদ্ধ, কলি-হৃদয়-প্রোথিত-শল্যবৎ সুস্পষ্ট [প্রতিভাত] এই স্তম্ভে, তাঁহার দ্বারা হরির প্রিয়সখা ফণিগণের [শত্রু] এই গরুড়মূর্ত্তি [তার্ক্ষ্য] আরোপিত হইয়াছে।[২]

(২৮)

 তাঁহার যশ অখিল দিগন্ত পরিভ্রমণ করিয়া, এই পৃথিবী হইতে পাতাল-মূল পর্য্যন্ত গমন করিয়া, [আবার] এখানে হৃতাহি-গরুড়চ্ছলে উত্থিত হইয়াছে।[৩]

 [এই] প্রশস্তি সূত্রধার বিষ্ণুভদ্র কর্ত্তৃক উৎকীর্ণ হইয়াছে।[৪]


    course, বলিয়া ব্যাখ্যা করিয়া গিয়াছেন। এক্ষণে কেবল “ধা”-অক্ষরটি কোন ক্রমে দৃষ্টিগোচর হয়। “স্বর্ধুনী” [মন্দাকিনী] সমুদ্রে পতিত হয় নাই বলিয়া, “অসিন্ধু-প্রসৃতা”। কিন্তু বাণী পক্ষে তাহার অর্থ কি, তাহা প্রতিভাত হয় না। তৎকালে সিন্ধুদেশ যবনাক্রান্ত থাকায়, তথায় পাল-সাম্রাজোর প্রধান মন্ত্রীর আদেশবাণী প্রসৃত হইত না,—এইরূপ অর্থ ইঙ্গিতে সূচিত হইয়াছে কি না, তাহা চিন্তনীয়।

  1. এই শ্লোকের “প্রপেদিরে” ক্রিয়াপদের অনুক্ত কর্ত্তৃপদ “লোকা” ধরিয়া লইয়া, অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ মর্ম্মানুবাদ করিয়াছেন। ব্রহ্মার নব-মানস-পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করিবার পৌরাণিক আখ্যায়িকা অবলম্বন করিয়া, এই শ্লোক রচিত হইয়া থাকিতে পারে।
  2. অক্ষর-বিলোপ এই শ্লোকের ভাব-প্রকাশের অন্তরায় হয় নাই; কিন্তু বিলুপ্ত অক্ষরগুলির দ্বারা কি কি শব্দ উৎকীর্ণ হইয়াছিল, তাহা নিঃসংশয়ে অনুমান করিবার উপায় নাই।
  3. যাহারা অন্যের যশঃ সহ্য করিতে পারে না, তাহারা সর্পবৎ খল বলিয়া, সংস্কৃত-সাহিত্যে সুপরিচিত। তাহাদের পরাভব সূচিত করিবার জন্য, স্তম্ভের উপর “হৃতাহি-গরুড়-মূর্ত্তি” স্থাপিত হইয়া থাকিতে পারে। যশের বর্ণ শুভ্র বলিয়া সুপরিচিত; তাহার সহিত গরুড়ের বর্ণের কোনরূপ সাদৃশ্য আছে কি না, তাহা চিন্তনীয়। তান্ত্রিক পদ্ধতিক্রমে গরুড় পূজার যে ধ্যান উল্লিখিত আছে, তাহা এইরূপ, যথা—

    “वर्स्मान्त-वह्नियुग्माक्षर-कमलगतं पञ्चभृताद्यवर्णं
    कॢप्ताकल्पं फणीन्द्रैरभयवरकरं पद्मनेत्रं सुवक्त्रम्।
    दुष्टाहिच्छेदितुण्डं स्मरदखिलविषप्रोषणं प्राणभृतं
    प्राणश्रेण्यां त्रिवेदीतनुसमृतमयं पक्षिराजं भजेऽहम्॥”

  4. ইহা সূত্রধারের চ্যুত-সংস্কৃত-রচনার নিদর্শনমাত্র।

৮৫