পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সারনাথ-লিপি।

(৪)

 “অষ্ট-মহাস্থান”-শৈলবিনির্ম্মিত[১] “গন্ধকূটী”[২] নূতন করিয়া নির্ম্মাণ করিয়া দিয়াছেন।

(৫)

 যে সকল ধর্ম্ম হেতু হইতে সমুদ্ভূত, তাহাদিগের হেতু কি, তথাগত (বুদ্ধদেব) তাহা ব্যক্ত করিয়াছিলেন। তাহাদিগের যাহা নিরোধ তাহা এইরূপ, মহাপ্রমণ (বুদ্ধদেব) এইরূপ বলিতেন।[৩]

 সংবৎ ১০৮৩। ১১ই পৌষ।

    স্থিরপাল এবং বসন্তপাল উভয়কেই মহীপালদেবের “অনুজ” বলিয়া ব্যক্ত করিতে পারে। পদমর্য্যাদা-বিজ্ঞাপক “শ্রীমান্” শব্দ সাধারণ রাজকর্ম্মারীর সম্বন্ধে ব্যবহৃত হইবার সম্ভাবনা অল্প বলিয়াই বোধ হয়। এই শ্লোকের “বোধাবিনিবর্ত্তিনৌ” বিশেষণ-পদেও স্থিরপাল-বসন্তপালের প্রাধান্য কীর্ত্তিত হইয়াছে। তাঁহারা সাধনপথ অবলম্বন করিয়া, সম্বোধি লাভের আশায় জলাঞ্জলি দিয়া, সংসারে বিনিবর্ত্তন করেন নাই বলিয়া, তাঁহাদের পাণ্ডিত্য “সফলীকৃত” হইয়াছিল। যে দেশে অনেক রাজকুমার চিরপ্রব্রজ্যা গ্রহণ করিতেন, সে দেশে মহীপালদেবের অনুজদ্বয়ের পক্ষে তাহা গ্রহণ করা আশ্চর্য্যের বিষয় বলিয়া কথিত হইতে পারে না। “অনুজ”-শব্দ স্থিরপাল এবং বসন্তপাল উভয়ের পক্ষেই তুল্যরূপে প্রযোজ্য; সুতরাং তাঁহারা যে পরস্পরের ভ্রাতা ছিলেন, এই মাত্রই বলা হয় নাই,—তাঁহারা উভয়েই “অনুজ”-পদবাচ্য, ইহাও বলা হইয়াছে। এরূপ রচনাভঙ্গীর প্রতি লক্ষ্য করিলে, তাঁহাদিগকে মহীপালদেবের “অনুজ” বলিয়াই গ্রহণ করা যাইতে পারে।

    “अशोको नाम धर्म्मराजो(?) चतुरशीतिं धर्म्मराजिका-सहस्रं प्रतिष्ठापयिष्यति”—দিব্যাবদান গ্রন্থের [৩৭৯ পৃঃ] এই উক্তি উদ্ধৃত করিয়া, অধ্যাপক ফুসে “ধর্ম্মরাজিকা”-শব্দের অর্থ প্রকাশিত করিয়াছেন। তদনুসারে অশোক-কৃত স্তূপই “ধর্ম্মরাজিকা” এবং তাহাই সংস্কৃত হইবার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। তৎপ্রতি লক্ষ্য না করিয়া, অনেকেই সারনাথের “ধামেক” নামক স্তূপকে “ধর্ম্মরাজিকা” বলিয়া বর্ণনা করিয়া আসিতেছেন।

  1. বৌদ্ধ-সাহিত্যে দুই শ্রেণীর “অষ্ট-মহাস্থানের” পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। অধ্যাপক ভিনিস্ আপনাকে “শুষ্ক-বৈয়াকরণ” বলিয়া অভিহিত করিয়া লিথিয়াছেন, “অষ্টমহাস্থান-শৈলগন্ধকূটী” ব্যাকরণ-শাস্ত্রানুসারে “অষ্টমহাস্থান হইতে সংগৃহীত শিলা দ্বারা নির্ম্মিত গন্ধকূটী” এইক্লপ অর্থ প্রকাশিত করিলে, শৈল-শব্দের পরিবর্ত্তে শিলা-শব্দের ব্যবহার করিতে হইত। এই সমাস-নিবদ্ধ-পদে অষ্টমহাস্থান [নামক রচনা-বিজ্ঞাপক স্থানে] সংযুক্ত শিলা-নির্ম্মিত গন্ধকূটী সূচিত হইয়া থাকিবে,—ইহাই তাঁহার অভিপ্রায়। যথা,—“The idea of stones, brought from eight places, might have been extracted from the compound, if it had contained the word Silā instead of Saila. But as it reads in the inscription, the compound, when resolved into sentences, can strictly mean no more than this:—the shrine is made of stones; and, in the shrine are, eight great places (positions). I would therefore make over the word, mahāsthāna, great or lofty place or position, as an architectural term, to the Indian Archæologist to explain or even to explain away, according to his needs. A “mere grammarian” Suska-vaiyákarana, like myself does well to attempt no more.—J. A. B. B. (New Series) Vol. II, No. 9, p. 447.
  2. বুদ্ধদেবের বাসস্থানের উপর যে সকল মন্দির নির্ম্মিত হইয়াছিল, তাহাই “গন্ধকূটী” নামে পরিচিত। “গন্ধকূটীতে” বুদ্ধমূর্ত্তি প্রতিষ্ঠিত থাকিত। “প্যাগ্-সাম-জন্-জাঙ্গ” নামক তিব্বতীয় গ্রন্থে “গন্ধালয়” নামের অপভ্রংশ “গন্ধোলার” উল্লেখ আছে।
  3. বৌদ্ধমত-বিজ্ঞাপক এই মন্ত্রটি বিনয়-পিটকের অন্তর্গত। ইহাতে সূত্ররূপে শাক্যসিংহের উপদেশের সার মর্ম্ম নিহিত আছে বলিয়া, ইহা উত্তরকালে মন্দিরে, চৈত্যে, শ্রীমূর্ত্তিতে উৎকীর্ণ হইত। হৃজ্ ডেভিডস্ (Vinaya Texts I, p. 146) ইহার এইরূপ ইংরাজী অনুবাদ করিয়াছেন। যথা,—

    Of all objects which proceed from a Cause
    The Tathāgata has explained the cause,
    And he has explained their Cessation also;
    This is the doctrine of the great Samana."

১০৯