লেখমালা।
(৯)
ধর্ম্মপুত্র [যুধিষ্ঠিরে] সত্যবাক্য, পর্ব্বতমালায় স্থিরত্ব, সমুদ্রে গাম্ভীর্য্য, সুরগুরু [বৃহস্পতিতে] বহু-আশ্চর্য্য-গুণশালিনী বুদ্ধি, ভাস্করে তেজস্বিতা;—এই সকল গুণ পৃথক্ পৃথক্ লক্ষিত হইয়া থাকে; কিন্তু [শূদ্রক] তদীয় উদ্বেলিত জিগীষা-রসে [এই ব্যবস্থাকে পরাভূত করিবার অভিপ্রায়ে] একাধারে এই সকল গুণান্বিত বিশ্বাদিত্য নামক পুত্রকে জন্মদান করিয়াছিলেন।
(১০)
এই পুত্র, ষোড়শ-কলা-পরিপূর্ণ তাপান্তকর সুধানিধি [চন্দ্রের] ন্যায়,[১] চতুঃষষ্টিকলা-সম্পন্ন বলিয়া, [লোক-সমাজের] তাপান্তকর ছিলেন। সমুন্নত-শৈলশিখরারূঢ়, প্রখর-কিরণ-প্রকাশক মার্ত্তণ্ড-দেবের ন্যায়, তিনিও অত্যুচ্চ সমুন্নতি লাভ করিয়া, প্রবল প্রতাপান্বিত হইয়াছিলেন। তিনি অজস্রভাবে সমস্ত যাচকগণের প্রত্যেকের অন্তঃকরণের অভিলষিত ফল প্রদানের শোভায় সমন্বিত হইয়া, যেন [জঙ্গম] বিচরণ-শীল কল্পবৃক্ষরূপেই প্রতিভাত হইতেন।
(১১)
তাঁহার বাহু-দণ্ড-যুগলের প্রচণ্ড বিক্রম-[রূপ]-কশার আঘাত প্রাপ্ত দিগ্বাজিসমূহের শৌর্য্য-সঞ্জাত অদ্ভুত ক্রীড়ায় তাঁহার অরাতি-কানন উৎপাটিত হইত; তিনি প্রবল প্রতাপে অরুণ-রাগ-রঞ্জিত ছিলেন। মহাসাগর যেমন[২] আলীর সমীপবর্ত্তী হইয়া [বাধাপ্রাপ্ত হইয়াও, তাহাতে বিক্ষুব্ধ না হইয়া] ধৈর্য্য প্রকাশ করিয়া থাকে;—তিনিও সেইরূপ আপৎকাল সন্নিহিত হইলে, ধৈর্য্য প্রকাশ করিতেন; [কিঞ্চ] প্রচুর সম্পদের অধিকারী হইয়াও, তিনি[৩] প্রাকৃত জনগণের ন্যায় গর্ব্বপ্রকাশ করিতেন না।
(১২)
যে ব্যক্তি, [অন্য-ব্যাসঙ্গঃ] অসদ্বিষয়ে দৃঢ়াসক্ত হইয়া, অসমুচিত ব্যবহারে [বিকলঃ] দুর্ব্বল হইয়া পড়িয়াছে, সে ধনলাভ করিলে, তাহা মদ্যের ন্যায় তাহাকে পদস্খালিত এবং উপহাসাস্পদ করিয়া থাকে। কিন্তু সেই ধন বিশ্বাদিত্যের পক্ষে সমুচিত বিলাসের অভ্যুদয় সাধন করিত, তাহা তাঁহার পক্ষে যথার্থই অলঙ্কার বলিয়া প্রতিভাত হইত, এবং তাহাতে জনসমাজেরও সমধিক আনন্দ উপস্থিত হইত।
১১৮