পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লেখমালা।

(৩)

 বাহুবিক্রমে সুবিখ্যাত শাস্ত্রবিৎ-শ্রেষ্ঠ যোগদেব নামক সুপরিচিত [ব্যক্তি] বংশানুক্রমে সেই [নৃপতির] মন্ত্রী হইয়াছিলেন।

(৪)

 সেই প্রবলপরাক্রমশালী নরপালের রামপাল-নামক [এক] পুত্র জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তিনি পালকুল-সমুদ্রোত্থিত [শতকিরণ] চন্দ্র [রূপে প্রতিভাত], এবং সাম্রাজ্য-[লাভে] খ্যাতিভাজন হইয়াছিলেন। রামচন্দ্র যেমন অর্ণব লঙ্ঘন করিয়া, রাবণ-বধান্তে জনক-নন্দিনী লাভ করিয়াছিলেন; রামপালদেবও [যথাবৎ] সেইরূপ যুদ্ধার্ণব সমুত্তীর্ণ হইয়া, ভীম নামক ক্ষৌণী-নায়কের বধ সাধন করিয়া, জনকভূমি [বরেন্দ্রী] লাভে, ত্রিজগতে [শ্রীরামচন্দ্রের ন্যায়] আত্মযশঃ বিস্তৃত করিয়াছিলেন।[]

(৫)

 পুরাকালে [সেই রামপালদেবের] “তত্ত্ববোধভূ” বোধিদেব নামক সর্ব্বত্র[] সুপরিচিত বিশুদ্ধ-স্বভাব মন্ত্রী বর্ত্তমান ছিলেন। তিনি আশ্চর্য্য গুণ-গৌরবে পৃথিবীতে তাঁহার সমকক্ষ ব্যক্তিকে [উজ্ঝিত] অতিক্রান্ত করিয়াছিলেন,—[তৎকালে তাঁহার তুল্য গুণসম্পন্ন আর কেহই বর্ত্তমান ছিলেন না]।

(৬)

 প্রতাপদেবী ইঁহার পত্নী ছিলেন। তিনি ধর্ম্ম-ঋদ্ধি-কীর্ত্তির বিশ্রামভূমি বলিয়া পরিচিতা ছিলেন। তাঁহার কান্তি অসীম বলিয়া কথিত হইত; এবং তিনি স্বামি-সন্তোষের মূর্ত্তিমতী প্রতিমারূপে বর্ত্তমান ছিলেন।

  1. অধ্যাপক ভিনিস্ এই শ্লোকোক্ত “জনকভূ”-শব্দের মিথিলা-অর্থ গ্রহণ করিয়া, রামপাল কর্ত্তৃক ভীম নামক মিথিলাধিপতির পরাজয়-সাধনের ইঙ্গিত করিয়া লিখিয়াছেন,—“I can not identify the name.” এই শ্লোকের সহিত মিথিলার সম্পর্ক নাই। “জনকভূ”-শব্দে পাল-রাজগণের জন্মভূমি “বরেন্দ্রী” সূচিত হইয়াছে। তৃতীয় বিগ্রহপালদেবের পরলোক গমনের পর, তদীয় জ্যেষ্ঠপুত্র দ্বিতীয় মহীপালদেবের যথেচ্ছ-শাসনে সংক্ষুব্ধ হইয়া প্রজাপুঞ্জের নায়ক [কৈবর্ত্তজাতীয় দিব্য] তাঁহাকে সিংহাসনচ্যুত ও নিহত করিলে, কিয়ৎকালের জন্য পাল-রাজগণের “জনকভূ” [বরেন্দ্রী] দিব্য, তস্য ভ্রাতা রুদোক, এবং ভ্রাতুষ্পুত্র ভীম নামক ক্ষৌণী-নায়কের করতলগত হইয়াছিল। রামপাল বহু চেষ্টায়, বহু ক্লেশে, সেই “জনকভূ”র উদ্ধার সাধন করিয়াছিলেন বলিয়া, [স্বনাম-সাদৃশ্যে এবং স্বকার্য্য-সাদৃশ্যে] দ্বিতীয় রামচন্দ্র রূপে প্রতিভাত হইয়াছিলেন। রাজকবি এই ঐতিহাসিক ঘটনা বিবৃত করিবার অভিপ্রায়ে, রাম-পক্ষে এবং রামপাল-পক্ষে তুল্যরূপে প্রযোজ্য “जनकभू-लाभात्”, “भीम-रावण-वधात्” এবং “युद्धार्ण्णवोलङ्घनात्” এই তিনটি শ্লিষ্ট-পদের ব্যবহার করিতে বাধ্য হইয়াছেন। সন্ধ্যাকরনন্দি-বিরচিত “রামচরিত” কাব্যে এই ঐতিহাসিক ঘটনার আনুপূর্ব্বিক বিবরণ দেখিতে পাওয়া যায়, এবং তাহার কোন কোন স্মৃতিচিহ্ন বরেন্দ্র-ভূমিতে অদ্যাপি বর্ত্তমান আছে। এই প্রশস্তিতে কৈবর্ত্ত-রাজ ভীম “ক্ষোণী-নায়ক” বলিয়া উল্লিখিত;—রাজকবি তাঁহাকে “নায়ক” মাত্রই বলিয়াছেন, রাজা বলেন নাই।
  2. এই শ্লোকের “বিশ্বক্”-শব্দের অর্থ—সর্ব্বতঃ। “উজ্ঝিকাত্ম-সদৃশঃ”-বিশেষণটিও উল্লেখ-যোগ্য। এতদ্বারা বোধিদেবের অদ্বিতীয়ত্ব প্রতিপাদিত হইয়াছে।

১৩৮