পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কমৌলি-লিপি।

সমাচ্ছন্ন হইতে দেখিয়া, [সেই ছিন্নশিরঃ সমূহকে] সহসা রাহুব্যূহ-সমূহের[] সমাগম মনে করিয়া, ভয়-সন্ত্রস্ত মার্ত্তণ্ডদেব ধূলিপটলের দ্বারা আত্ম-প্রভার বিলোপ সাধন করিয়া, আত্ম-গোপন করিয়াছিলেন।

(১৮)

 মহাসাগর [চন্দ্রস্যোদ্ভবভূঃ] চন্দ্রের উদ্ভব-স্থান; [মহীধ্র-শরণং] মহীধর পর্ব্বতগণের আশ্রয়; [সত্বপ্রধানাশয়ঃ] জীবগণের আধার; [পাত্রশ্রী-মহিতঃ] তলদেশে-শোভা-সমন্বিত; [স্ফুরৎ-রসময়ঃ] স্ফুরণশীল-সলিল-পরিপূর্ণ; [গভীরঃ পরঃ] নিরতিশয় গভীর গর্ভসংযুক্ত; [রত্নানাং নিলয়ঃ] রত্নরাজির নিকেতন; [শ্রিয়ঃ কুলগৃহং] লক্ষ্মীদেবীর কুলগৃহ; [স্বান্তস্থিত-শ্রীপতিঃ] লক্ষ্মীপতি বিষ্ণুর বিশ্রামস্থান;—এই বৈদ্যদেবও [চন্দ্রস্যোদ্ভবভূঃ] আহ্লাদের উদ্ভবস্থান; [মহীধ্র-শরণং] মহীপালক সামন্ত নরপালগণের আশ্রয়; [সত্ব-প্রধানাশয়ঃ] সত্বগুণান্বিত চিত্তসম্পন্ন; [পাত্রশ্রী-মহিতঃ] মন্ত্রি-সৌন্দর্য্যে সুশোভিত; [স্ফুরৎ-রসময়] স্ফুরণশীল বিবিধ রসে পরিপূর্ণ; [গভীরঃ পরঃ] নিরতিশয় গভীর জ্ঞান-সম্পন্ন; [রত্নানাং নিলয়ঃ] রত্নরাজির অধীশ্বর; [শ্রিয়ঃ কুলগৃহং] লক্ষ্মীর নিবাসস্থান; [স্বান্তস্থিত-শ্রীপতিঃ] অন্তঃকরণে বিষ্ণুচিন্তা-পরায়ণ;—এইরূপ, মহাসাগর যেমন [জলাধার] জলের আধার, তিনিও সেইরূপ [জলাধার] জড়ের প্রশ্রয়দাতা হইলে, এবং মহাসাগর যেমন [লঙ্ঘিতঃ] শ্রীরামানুচর-কর্ত্তৃক উল্লঙ্ঘিত, তিনিও সেইরূপ [লঙ্ঘিতঃ] অন্যের নিকট পরাভূত হইলে, এই বৈদ্যদেব [সর্ব্বাংশেই] অম্বুধি-সদৃশ বলিয়া কথিত হইতে পারিতেন।[]

  1. মেদিনী-কোষে “বিসর”-শব্দ ‘প্রসর’ বলিয়া ব্যাখ্যাত হইলেও, ইহার “সমূহার্থই” সুপরিচিত। যথা অমরকোষে [২।৫।৩৯]

    “समूह-निवह-व्यूह-सन्दोह-विसर-व्रजाः।
    स्तोमौख-निकर-व्रात-वार-संघात-सञ्चयाः॥”

    এখানে “বিসর-রাহুব্যূহ” পদে বহুসংখ্যক [ব্যূহাকারে সজ্জিত] রাহুগণের সমাগম কল্পিত হইয়াছে। যে সূর্য্যদেব একটিমাত্র রাহু-সমাগমে সন্ত্রস্ত হইয়া থাকেন, তাঁহার পক্ষে বহুসংখ্যক [ব্যূহাকারে সজ্জিত] রাহুগণের সমাগম অত্যন্ত অধিক শঙ্কা সূচিত করিতেছে।

  2. এই শ্লোকে অনেক দ্ব্যর্থ-শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে। “চন্দ্র”-শব্দে চন্দ্রদেবকে এবং আহ্লাদজনক ব্যক্তিকে বুঝিতে হইবে। সেইরূপ,—“মহীধ্র-শরণ”-শব্দের এক অর্থ “পর্ব্বতসমূহের আশ্রয়”, অন্য অর্থ “মহীপালগণের আশ্রয়”;—“সত্ব”-শব্দের এক অর্থ “জীব”, অন্য অর্থ “সত্ব-গুণ”;—“পাত্র”-শব্দের এক অর্থ [তীরদ্বয়ান্তরং ইতি মেদিনী] “উভয় তীরের মধ্যবর্ত্তী তল-দেশ”, অন্য অর্থ “রাজমন্ত্রী”; “মহিতঃ”-শব্দটি উল্লেখযোগ্য। পূজা-বিজ্ঞাপক মহ্-ধাতু হইতে [৩।২।১৮৮] পাণিনি-সূত্রানুসারে নিষ্পন্ন “মহিতঃ”-শব্দের অর্থ “পূজিতঃ”। ভট্টিকাব্যে [১০।২] “রাম-মহিতঃ” প্রয়োগ দ্রষ্টব্য। “রস”-শব্দের এক অর্থ “জল”, অন্য অর্থ “বিবিধ রস”;—“আশয়”-শব্দের এক অর্থ “আধারঃ”, অন্য অর্থ “চিত্ত”;—“স্বান্ত”-শব্দের এক অর্থ [গহ্বরং ইতি মেদিনী] গহ্বর, ইহার প্রয়োগ ভাগবতে [২।৬।৩৪] দ্রষ্টব্য, অন্য অর্থ [স্বান্তং মনঃ ইত্যমরঃ ১।৪।৩১] মন বা অন্তঃকরণ। “জলাধার”-শব্দের “জলাশয়”-অর্থ অমরকোষে [১।১০।২৫] সুবিদিত; “জল”-শব্দের আর একটি অর্থ “জড়” মেদিনী-কোষে দ্রষ্টব্য। দুইটি বিষয়ে

১৪৩