পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মনহলি-লিপি।

(১৫)

 তিনি সর্ব্ববিধ অস্ত্রশস্ত্রের প্রাগল্‌ভ্যে[১] শত্রুবর্গের স্বচ্ছন্দ-স্বাভাবিক-বিভ্রমাতিশয্যধারী মনে শীঘ্রই বিস্ময়-ভয় বিস্তৃত করিয়া দিয়াছিলেন।

(১৬)

 [দিব্য-প্রজার] দেবলোক-নিবাসিগণের[২] [অসুরাক্রমণ-সঞ্জাত] অতিশয় চিত্তচাঞ্চল্যে আহূত হইয়া, আন্দোলিত-চিত্ত দেবরাজ [বাসব] যেমন ধৈর্য্যাবলম্বন করিাছিলেন, এই নরপতির সহোদর শ্রীরামপাল নামক নরপতিও সেইরূপ [দিব্য-প্রজার] দিব্য-নামক কৈবর্ত্ত-পতির পক্ষভুক্ত প্রজাবর্গের অতিশয় আক্রমণে আহূত এবং আন্দোলিত-চিত্ত হইয়াও, ধৈর্য্যাবলম্বন করিয়াছিলেন। তাঁহার পিতার [চিরং] সুদীর্ঘ শাসন-সময়েই তিনি শৈশবে তেজঃপুঞ্জের বিস্ফুরণে শত্রু-মণ্ডলের চিত্তক্ষেত্র চমৎকৃত করিয়া দিয়াছিলেন।

(১৭)

 তাঁহার ঔরসে কুমারপাল জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্বকীয় সুবিস্তৃত বাহুবীর্য্য-প্রভাবে শত্রুবর্গের যশঃসাগর নিঃশেষে পান করিয়াছিলেন,[৩] এবং অমরকামিনী-কপোল-কর্পূর-পত্রলেখা-রচনায় কীর্ত্তিলাভ করিয়াছিলেন।

১৫৭

    হইয়াছে;—বরেন্দ্রমণ্ডলে এ পর্য্যন্ত তাহা আবিষ্কৃত হয় নাই। বৈদ্যদেবের [কমৌলি-লিপিতে] শূরপালের নাম পর্য্যন্ত উল্লিখিত হয় নাই। সুতরাং শূরপাল অল্পকাল নামমাত্র রাজা ছিলেন বলিয়া বোধ হয়।

    গুণ-শব্দে দুইটি অর্থ ধ্বনিত হইয়াছে। সারথী-পক্ষে তাহার অর্থ—অশ্বচালনরজ্জু।

  1. শূরপালের অস্ত্রশস্ত্রের অভাব ছিল না, তাঁহার শত্রুবর্গের হৃদয়ে কেবল স্বাভাবিক বিভ্রমাতিশয্যই বর্ত্তমান ছিল। এই শ্লোকে এইরূপ আভাস প্রাপ্ত হওয়া যাইতে পারে।
  2. এই শ্লোকের “দিব্য-প্রজা” দুইটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে বলিয়াই বোধ হয়। কৈবর্ত্ত-বিদ্রোহের নায়ক “দিব্য” তৎকালে প্রসিদ্ধি লাভ করায়, অন্যান্য স্থলেও তাঁহার নাম ইঙ্গিতে উল্লিখিত হইয়াছে। সম্প্রতি ঢাকা জেলার বেলাব গ্রামে ভোজবর্ম্মদেবের যে তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহাতেও এইভাবে “দিব্যের” নাম উল্লিখিত আছে। এই অর্থ গ্রহণ না করিলে, উভয় পক্ষের অর্থ সঙ্গতি রক্ষিত হইতে পারে না। “নির্ভর”-শব্দটির “অতিশয়ার্থ” সুবিদিত। জয়দেব [গীতগোবিন্দে] তাহার ব্যবহার করিয়া গিয়াছেন। যথা,—

    “रासोल्लासभरेण विभ्रमभृता माभीर वामभ्रुवा
    मभ्यर्णं परिरभ्य निर्भरमुरः प्रेमान्धया राधया।
    साधु तद्वदनं सुधामय मिति व्याहृत्य गीतस्तुति-
    व्याजादुद्भट-चुम्बितः स्मितमनोहारी हरिः पातु वः॥”

    রামপাল জন্মভূমি হইতে তাড়িত হইয়াও, কিরূপ ধৈর্য্যাবলম্বনে দীর্ঘকালের অধ্যবসায়ে জন্মভূমির [বরেন্দ্রীর] উদ্ধার-সাধন করিয়াছিলেন, “রামচরিত” কাব্যে তাহা বিস্তৃতভাবে উল্লিখিত আছে। সেই ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণ করিয়া, রাজকবি এই শ্লোকে ইঙ্গিতে তাহার পরিচয় দিবার অভিপ্রায়ে, ইন্দ্রের স্বর্গোদ্ধারের সহিত রামপালের কার্য্যের তুলনা করিতে গিয়া, এইরূপ রচনা-কৌশলের অবতারণা করিয়া থাকিতে পারেন।

  3. রামপালদেবের বরেন্দ্রভূমির উদ্ধারসাধন-চেষ্টায় কুমারপাল সেনানায়ক ছিলেন বলিয়া “রামচরিতে” উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। কুমারপালের শাসন-সময়েও, তাঁহার প্রধানমন্ত্রী বৈদ্যদেবের চেষ্টায় ‘অনুত্তর-বঙ্গে’ এবং